পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

হওয়াতে তিনি সন্ন্যাসীর বেশে হিমালয়ের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। সেই ভ্রমণকাহিনীই পরে “হিমালয়” ও “পথিক” প্রভৃতি নামে প্রকাশিত হয়।

 প্রথম শোকের ধাক্কা সামলে নিয়ে চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় আবার বিবাহ করেছিলেন এবং “উদ্ভ্রান্ত প্রেমে”র মত আর কোন গদ্যকাব্য রচনা করেন নি। জলধরবাবুও দেশে ফিরে দ্বিতীয় বিবাহ ক’রে সংসারী হয়েছিলেন।

 জলধরবাবুর দেশ হচ্ছে কুমারখালি। তিনি সাহিত্যচর্চাও করেছেন অল্পবয়স থেকেই। তাঁর সাংবাদিক জীবনের সূত্রপাতও পল্লীগ্রামেই। প্রথমে তিনি “গ্রামবার্তা”র সম্পাদক হন, তারপর সারাজীবনই সম্পাদকীয় কর্তব্য পালন করেছেন। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে “বসুমতী”, “হিতবাদী”, “সুলভ সমাচার” ও “ভারতবর্ষ” পত্রিকা।

 জলধরবাবুর লেখনী ছিল বড় মিষ্ট, বড় দরদী; তাই অতি অনায়াসেই পাঠকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার সম্বন্ধ স্থাপন করতে পারত। স্বচ্ছ, সরল, সরস ভাষা—যেন সোজা তাঁর প্রাণের ভিতর থেকেই বেরিয়ে এসে ঝ’রে পড়ত লেখনীমুখ দিয়ে, কোনরকম কৃত্রিমতার ধার না ধেরেই। বাংলা সাহিত্যে আগে সত্যিকার ভ্রমণকাহিনীর বড়ই অভাব ছিল। আগে যাঁরা ভ্রমণকাহিনী লিখতেন, তাঁরা ভ্রমণকাহিনী রচনার আর্ট জানতেন না (যেমন এখনো অনেকেই জানেন না)। অবশ্য রবীন্দ্রনাথের “য়ুরোপযাত্রী” এবং অন্যান্য দু-একজনের রচনায় এর ব্যত্যয় দেখা গেছে বটে। কিন্তু জলধরবাবুর প্রসাদগুণে পরিপূর্ণ দরদী ভাষায় হিমালয়ের ভ্রমণকাহিনীগুলি যখন মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হ’তে লাগল, পাঠকসমাজ তা গ্রহণ করলে সাগ্রহ আনন্দে। তার আগে আর

১৫৯