পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

তিনি কলকাতার হ্যারিসন রোডের বিখ্যাত ওস্তাদ শ্যামলালবাবুর শিষ্য। তিনিই প্রথমে আমাকে বুঝিয়ে দেন, হারমোনিয়মও অসামান্য হয়ে উঠতে পারে। করমতুল্লা খাঁয়ের ভ্রাতুষ্পুত্র রফিক খাঁও আর একজন অসাধারণ হারমোনিয়ম-বাদক।

 নরেন্দ্রনাথের বৈঠকেই সর্বপ্রথমে গায়ক জমীরুদ্দীন খাঁ ও তবলা-বাদক দর্শন সিংকে দেখি।

 এই দর্শন সিংও ছিলেন একজন উচ্চশ্রেণীর শিল্পী। তবলায় তাঁর হাতের বোল সৃষ্টি করত অপূর্ব মাধুর্য। তিনি করমতুল্লা খাঁয়ের সরোদের সঙ্গে এবং জমীরুদ্দীন খাঁয়ের গানের সঙ্গে সঙ্গত করতেন। কিন্তু তারের যন্ত্রের সঙ্গে তাঁর তবলা বাজত যে সুরে ও যে চালে, কণ্ঠ-সঙ্গীতের সময়ে বদলে যেত তার সুর ও চাল।

 জমীরুদ্দীনের রংটি কালো হ’লেও দেহখানি ছিল সুঠাম ও মুখখানিও সুদর্শন এবং সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তাঁর ভাবমধুর চোখদুটি— রীতিমত প্রেমিকের চোখ। গানের সময়ে সেই চোখ দুটির ভিতর দিয়েও দেখা যেত বিভিন্ন ভাবের অভিব্যক্তি।

 চমৎকার ঠুংরি গাইলেন তিনি, ভিজিয়ে দিলেন মন সুরধারাপাতে। অপূর্ব গানের গলা, গাম্ভীর্যে ভরপূর হ’তেও পারে, আবার পেলবতায় তরল হয়েও আসে। তান, মাড়, গিটকিরি কিছুরই অভাব নেই এবং সবই অভিব্যক্ত হয় উচ্চশ্রেণীর শিল্পীর দরদের ভিতর দিয়ে। হলুম মুগ্ধ।

 তারপর তাঁর ঘন ঘন দেখা পেতে লাগলুম আমার আর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিশ্ববিখ্যাত মল্লযোদ্ধা শ্রীযুক্ত যতীন্দ্র গুহ বা গোবরবাবুর বৈঠকে। সেখানে যাঁরা আসনগ্রহণ করতেন তাঁদের অধিকাংশই সঙ্গীতবিদ, পালোয়ান বা অন্য শ্রেণীর লোক, সাহিত্যিকদের মধ্যে থাকতুম কেবল আমি ও প্রেমাঙ্কুর (আতর্থী)।

১৬৬