পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ’রে চলত জমীরুদ্দীনের গান ও দর্শন সিংয়ের তবলা। রাতের পর রাত এই ব্যাপার। রাত যত গভীর হয়, গান তত জ’মে ওঠে। জমীরুদ্দীনের গানের ভাণ্ডার যেন অফুরন্ত, প্রতি রাত্রেই শুনি নূতন নূতন গান— খেয়াল, ঠুংরি, টপ্পা, গজল, ভজন। তাঁর কণ্ঠও যেন শ্রান্ত হ’তে শেখে নি। তারপর মধ্যরাত্রে গানের পালা থামিয়ে করমতুল্লা খাঁ যেদিন আবার সরোদ ধারণ ক’রে বাজাবার জন্যে প্রস্তুত হ’তেন, মনে মনে আমরা প্রমাদ গুণতুম। বেশ বুঝতুম, সেদিন বাড়ীতে ফিরতে ফিরতেই হয়তো ভোরের পাখীর নিদ্রাভঙ্গ হবে। কারণ খাঁ-সাহেব বীণা ধরবার পর কেউ আসর ত্যাগ করলে মনে মনে তিনি অত্যন্ত আহত হ’তেন। একদিন আমাকে প্রস্থানোদ্যত দেখে তিনি আমার হাত চেপে ধ’রে বন্দী করেছিলেন, সে গল্প তাঁর প্রসঙ্গে আগেই বলেছি।

 দিনে দিনে জমীরুদ্দীনের সঙ্গে আমার আলাপ একটু একটু ক’রে জ’মে উঠতে লাগল। তিনি বাঙালী মুসলমান ছিলেন না, বাংলা বর্ণপরিচয়ও বোধ করি হয় নি, তবে বহুকাল এদেশে বাস ক’রে বলতে শিখেছিলেন। উচ্চারণে কিছু কিছু ভুল হ’ত বটে, কিন্তু মনের ভাব ব্যক্ত করতে তাঁর অসুবিধা হ’ত না।

 নরেনবাবুর বৈঠক আগেই উঠে গিয়েছিল, কিছুদিন পরে গোবরবাবুর আসরও ভেঙে গেল। এইরকমই তো হামেসা হয়। এক আসর উঠে যায়, আবার নূতন আসরের পত্তন হয়। কিন্তু ঐ দু’টি আসরের অভাব পূরণ করতে পারে, আজকাল এমন কোন আসরের নাম শুনতে পাই না।

 কয়েক বৎসর কেটে যায়। জমীরুদ্দীনের দেখা বা সাড়া পাই না। এর-তার মুখে খবর পাই, অমুক অমুক ব্যক্তি জমীরুদ্দীনের কাছ থেকে সঙ্গীত শিক্ষা করছেন, তাঁদের কেউ কেউ আজ

১৬৭