পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 অনেক দিন আগেকার কথা। আমি তখন “ভারতী” পত্রিকার নিয়মিত লেখক এবং সম্পাদিকা ছিলেন স্বর্গীয়া স্বর্ণকুমারী দেবী। একদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলুম, “ভারতী”তে আমি বঙ্কিম-যুগের বাঙালীদের নিয়ে আলোচনা করতে পারি কি?

 সম্মতি দিয়ে সম্পাদিকা বললেন, ‘এ খুব ভালো প্রস্তাব। তুমি লেখা শুরু কর। কিন্তু হেমেন্দ্র, বয়স তোমার কাঁচা, তুমি যদি নিজের নামে পুরানো কথা লেখো, লোকের শ্রদ্ধা হবে না। তোমাকে নাম ভাঁড়িয়ে লিখতে হবে। সকলে ভাববে কোন সেকেলে লোকের লেখা।’

 তাই হ’ল। প্রসাদদাস রায়ের লেখা “বঙ্কিম-যুগের কথা” “ভারতী”তে ধারাবাহিক ভাবে মাসে মাসে বেরুতে লাগল। (তারপর ঐ নামে আমি অনেক পত্রিকায় অনেক লেখা লিখেছি এবং এখনো লিখছি। আসলে এটিই হচ্ছে আমার পিতৃপ্রদত্ত নাম এবং ‘হেমেন্দ্রকুমার রায়’ হচ্ছে ছদ্ম নাম। স্বর্ণকুমারী দেবীর পরামর্শে আমার আসল নামটিকেই আমি ব্যবহার করেছিলুম ছদ্ম নামের মত!)। সেই উপলক্ষে বঙ্কিম-যুগ সম্বন্ধে উপকরণ সংগ্রহ করবার জন্যে আমাকে তখনকার বহু প্রাচীন ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়ে বেড়াতে হয়েছিল।

 একদিন দুপুরে উত্তর-পূর্ব কলকাতার একটি রাস্তায় (নাম মনে পড়ছে না) মনোমোহন বসুর বাড়ীতে গিয়ে হাজির হলুম। বাড়ীর সদর দরজা খোলা ছিল। প্রবেশপথের দুই দিকে দুইটি রোয়াক। একটি রোয়াকের উপরে বসেছিলেন একজন বৃদ্ধ। না-রোগা, না-মোটা দেহ। শ্যামবর্ণ।

 সুধোলুম, ‘মনোমোহন বাবু আছেন?’

 বৃদ্ধ বললেন, ‘আমি। কি দরকার?’

১৭