পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 আমার উদ্দেশ্য জানালুম। একটু হেসে অঙ্গুলি সঙ্কেতে সামনের রোয়াক দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ‘বসুন।’

 উপবিষ্ট হয়ে জিজ্ঞাসা করলুম, ‘আপনি নাটক লেখা বন্ধ করলেন কেন?’

 —‘সুরুচির খাতিরে। যেখানে পতিতা নিয়ে অভিনয় হয়, সেখানে আমি নেই। কেবল আমি কেন, বিদ্যাসাগর মহাশয়ও তো প্রথমে পাবলিক থিয়েটারের সম্পর্কে এসেছিলেন, আর এজন্যে তাঁর উৎসাহও বড় কম ছিল না, কিন্তু থিয়েটারে পতিতাদের আগমনের কথা শুনেই তিনি পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।’

 —‘কিন্তু আপনাদের মত একজন সাহিত্যিকের প্রস্তাবেই তো রঙ্গালয়ে নারী নিয়ে অভিনয়ের প্রথা প্রচলিত হয়েছিল।’

 —‘মাইকেলের কথা বলছেন? মাইকেল ছিলেন ভিন্ন রুচির লোক, সেই অনুসারেই তিনি এই কুপ্রস্তাব করেছিলেন। মধুসূদন ক্রীশ্চান হয়ে ‘মাইকেল’ নাম ধারণ করেছিলেন, আমি গোঁড়া হিন্দু, হয়ে ও-রকম নাম ধারণ করতে যাব কেন? আর, আমি তো নারী নিয়ে অভিনয়ের বিরোধী নই, আমার আপত্তি পতিতাদের জন্যে। কিন্তু হিন্দুদের কুলকন্যারা যে নটী হয়ে রঙ্গমঞ্চে আরোহণ করবেন, এমন কথা স্বপ্নেও আমি ভাবতে পারি না। সেই জন্যেই আমি নারীর পার্টে পুরুষদেরই দেখতে চাই। জানি তার ফলে অভিনয় স্বাভাবিক হয় না, কিন্তু স্বাভাবিকতা রক্ষা করতে গিয়ে সমাজের সর্বনাশ করতে যাব কেন? দেখছেন তো, পতিতাদের সঙ্গেওঠা-বসা ক’রে থিয়েটারের অভিনেতাদের কতটা চারিত্রিক অবনতি হয়েছে? নট বলতে এখন বোঝায় সমাজ-ছাড়া বাপে-খেদানো, মায়ে-তাড়ানো, মাতাল, মূর্খ লোককে।’

 মনের ভিতরে কতকগুলি বিরুদ্ধ যুক্তির উদয় হ’ল। কিন্তু

১৮