পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 শরৎবাবু হো হো ক’রে হেসে উঠলেন।

 “যমুনা” কার্যালয়ে আমরা একটি বৃহৎ সাহিত্যবৈঠক রচনা করেছিলুম, তেমন বৈঠক আজ সহরের কোথাও নেই। সেখানে প্রত্যহ বৈকালের পরে যত বিখ্যাত সাহিত্যিক এসে আলাপআলোচনা করতেন, রীতিমত দীর্ঘ হবে তাঁদের নামের তালিকা। শরৎচন্দ্র রোজই এসে আসর জমিয়ে তুলতেন। তিনি কোনরকম কৃত্রিম ভঙ্গি বা গাম্ভীর্যের ধার ধারতেন না, গল্পের পর গল্প বলবার জন্যে সর্বদাই প্রস্তুত হয়ে থাকতেন, আর কত রকমের গল্পই যে তিনি জানতেন! গল্প বলতে বলতে মাঝে মাঝে খেলার মার্বেলের মত বড় বড় আফিমের গুলি নিক্ষেপ করতেন বদনবিবরে। সভয়ে ও সবিস্ময়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে একদিন তিনি আমাকে বললেন, ‘হেমেন্দ্র, যদি আরো ভালো লিখতে চাও, আমার মত আফিম ধরো।’

 আমি বললুম, ‘মাপ করুন মশাই, ও-রকম একটি মাত্র ডেলা যদি খাই, তাহ’লে আর ভালো লেখার সময় পাব না, কারণ যমদূতেরা খবর পেয়ে ছুটে আসবে।’

 শরৎচন্দ্র ছিলেন পয়লা নম্বরের আড্ডাধারী মানুষ, কোন কোন দিন দশ-বারো ঘণ্টা ধ’রে অশ্রান্ত ভাবে গল্প ক’রে গিয়েছেন, বাড়ী ফিরেছি আমরা রাত দুটো কি তিনটের সময়ে। তাঁর সেই প্রথম আত্মপ্রকাশের যুগে যাঁরা তাঁকে দেখেন নি, তাঁরা আগেকার শরৎচন্দ্র সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা করতে পারবেন না।

 প্রতিদিনই আসর ভাঙবার পর শরৎচন্দ্রের সঙ্গে বাড়ী ফিরতুম আমি। তখন তিনি বাস করতেন বড়বাজারের এক কুবিখ্যাত পল্লীতে। সেই সময়ে পথ চলতে চলতে তিনি নিজের বিচিত্র জীবনের কথা আমার কাছে ব’লে যেতেন একান্ত অসঙ্কোচে। তাঁর

১৮৪