পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

সরলতা দেখে বিস্মিত হতুম। একদিন বললেন, ‘হেমেন্দ্র, এমন নেশা নেই যা করি নি, এমন কুস্থান নেই যেখানে যাই নি। আজ এই ভেবে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই, এত ক’রেও তো আমি নিজকে হারিয়ে ফেলি নি! আমার মনের ভিতরকার মানুষটি চিরদিনই নির্মুক্ত হয়ে আছে।’

 এক রাত্রের ঘটনা। বর্ষাকাল, বৃষ্টি নেমেছে বৈকাল থেকেই। কলকাতার পথে পথে নদীর মত জলোচ্ছ্বাস। আড্ডা সেদিন জমল না। রাত নয়টা বাজতে না বাজতেই রাস্তা জনবিরল হয়ে পড়ল। শরৎচন্দ্রের সঙ্গে আমি হাঁটুভোর জল ভাঙতে ভাঙতে বাড়ীমুখো হলুম। আমাদের আগে আগে যাচ্ছিল একটি স্ত্রীলোক— কে সে, তার দিকে আমরা ভালো করে তাকিয়েও দেখি নি। সেও আস্তে আস্তে চলছে, আমরাও আস্তে আস্তে চলছি, কারণ অত জলে জোরে চলবার উপায়ও নেই।

 কিন্তু সেই দুর্যোগের রাত্রে প্রায়জনহীন পথেও যে আমাদের উপরে দৃষ্টিচালনা করবার জন্যে কৌতূহলী লোকের অভাব হয় নি, পরের দিন বৈকালে “যমুনা” কার্যালয়ে পদার্পণ ক’রেই সেটা বুঝতে পারলুম।

 ইতিমধ্যে কোন্ মহাপুরুষ চারিদিকে রটনা ক’রে দিয়েছেন, আমরা দুজনে নাকি গতকল্য রাত্রে এক গণিকার পিছু নিয়েছিলুম।

 আমি তো ব্যাপারটাকে হেসেই উড়িয়ে দিলুম, কিন্তু শরৎচন্দ্র তা পারলেন না। বিষম ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি বললেন, ‘ছি ছি, যা নয়, তাই! এমন হতভাগা লোকও থাকে! আমি বুড়োমানুষ, আর হেমেন্দ্র হচ্ছে একরত্তি ছোকরা, আমাদের দুজনের নাম জড়িয়ে এমন অপবাদ!’ তাঁর চোখ-মুখের ভাব দেখে মনে হ’ল, রটনাকারী সেখানে উপস্থিত থাকলে তার অঙ্গহানির সম্ভাবনা ছিল যথেষ্ট।

১৮৫