পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

বিশেষত্ব। তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের সময়েই এটা টের পেতে বিলম্ব হয় নি। একদিন আমাদের জানিয়ে দিলেন যে, তিনি সর্বদাই সশস্ত্র হয়ে থাকেন এবং প্রমাণ দেবার জন্যে ফস্ ক’রে বার ক’রে ফেললেন মস্ত একখানা ছোরা! সাহিত্যিক শ্রীপ্রেমাঙ্কুর আতর্থী তাঁর পাশ থেকে স’রে গিয়ে বসলেন ভয়ে ভয়ে, সচকিত চক্ষে।

 তারও কয়েক বৎসর পরে যখন তিনি রীতিমত যশস্বী এবং যখন তিনি বিখ্যাত ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিদিন উঠছেন বসছেন এবং সাজপোষাকেও বেশ সৌখীন হয়ে উঠেছেন, তখনও তাঁর হাতে থাকত একগাছা অত্যন্ত বেমানান, মোটাসোটা ও ভীতিকর লগুড়— যার আঘাতে অনায়াসেই গুঁড়ো হয়ে যেতে পারে মানুষের বা বড় বড় পশুর মাথা। প্রথম বয়সে শরৎচন্দ্র যাপন করেছিলেন দস্তুরমত দুর্দান্ত জীবন। উত্তরকালে একান্তভাবে সাহিত্যসাধক হয়েও বোধ করি তিনি পূর্ববর্তী বয়োধর্মের প্রভাব থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ক’রে নিতে পারেন নি। কেউ কোনদিন সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রকে লাঠালাঠি বা হাতাহাতি করতে দেখে নি বটে, কিন্তু তাঁর মনের ভিতরে নিশ্চয়ই আত্মগোপন ক’রে থাকত একটা উগ্র অংশ।

 তবে আমাদের কাছে তিনি ধরা দিয়েছিলেন যথার্থ প্রেমিক মানুষের মত। প্রায়ই সাহিত্য ও ললিতকলা নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হ’ত এবং প্রায়ই আলোচনা গিয়ে দাঁড়াত বিষম তর্কাতর্কিতে। অধিকাংশ সময়েই আমরা চার বন্ধু—প্রভাত গঙ্গোপাধ্যায়, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, সুধীর সরকার ও আমি— থাকতুম এক পক্ষে। প্রভাত ছিলেন তো একাই একশো, তর্কে তাঁর মুখ বন্ধ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার, তার উপরে আবার আমরা তিনজন এবং

১৮৯