পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

ধরলেন। তাঁর আঁকা ছবি যাঁরা দেখেছেন, প্রশংসা করেছেন। সে সব ছবি আমি দেখি নি, শরৎচন্দ্রের রেঙ্গুনের বাড়ীতে আগুন লেগে ছবিগুলি নষ্ট হয়ে যায়। ফিরে-ফিরতি কলম ধরবার পর ছবি আঁকা তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন।

 তিনি সঙ্গীত চর্চাও করেছিলেন অল্পবিস্তর। বাঁশী বাজাতে পারতেন, আর পারতেন তবলা বাজাতে। শ্রীমতী অনুরূপা দেবীর মুখে জানতে পারি, যৌবনেই শরৎচন্দ্র গায়ক রূপেও খ্যাতি লাভ করেছিলেন। রেঙ্গুনে অজ্ঞাতবাস করবার সময়েও গানকে তিনি ত্যাগ করেন নি। কবিবর নবীনচন্দ্র সেন একবার রেঙ্গুনে বেড়াতে যান। তাঁর সম্বর্ধনা-সভায় উদ্বোধন-সঙ্গীত গেয়েছিলেন শরৎচন্দ্র। তাঁর কণ্ঠমাধুর্যে খুসি হয়ে কবি তাঁকে উপাধি দিয়েছিলেন “রেঙ্গুন-রত্ন”।

 সাঁইত্রিশ কি আটত্রিশ বৎসর আগেকার কথা। আমি তখন পাথুরিয়াঘাটায় আমাদের পুরাতন বাড়ীতে। মা এসে বললেন, ‘তোর পড়বার ঘরে কে একটি ভদ্রলোক চমৎকার গান গাইছেন।’ বিস্মিত হয়ে নীচে নেমে গিয়ে দেখি, গালিচার উপরে তাকিয়া ঠেসান দিয়ে ব’সে আপন মনে গান গাইছেন শরৎচন্দ্রই। কণ্ঠস্বরে ওস্তাদির ছাপ না থাকলেও বড় মিষ্ট গলা। গাইতেও পারেন ভালো। কিন্তু আমার আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই গান থেমে গেল। বহু অনুরোধেও আর তিনি গাইলেন না। এর পরেও প্রায় তিনি আমার ঘরে এসে বসতেন, সেখানে তাঁর জন্যে দ্বার থাকত অবারিত এবং মাঝে মাঝে আড়াল থেকে তাঁর গান শুনেছি আরো কয়েকবার। কিন্তু আমার সাড়া বা দেখা পেলেই তাঁর গান হ’ত বন্ধ।

 মসিজীবী শরৎচন্দ্রের মনের ভিতরে ছিল খানিকটা ক্ষাত্র

১৮৮