পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

করবার বিষয়। তাঁর মত ছিল—‘যা ভাবি, তাই যেন লিখি।’ সে লেখা প‘ড়ে যে কেউ তুষ্টও হ’তে পারে, রুষ্টও হ’তে পারে, তা নিয়ে ছিল না তাঁর কিছুমাত্র মাথাব্যথা। তিনি আমরণ ছিলেন এইরকম নির্ভীক মনের অধিকারী।

 কিন্তু তিনি ছিলেন অভিমানী। “চরিত্রহীনে”র বিরুদ্ধে চারিদিকে যখন নিন্দার ঝড় উঠেছে, তখনও তিনি অটল ছিলেন। কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মত ধুরন্ধর সাহিত্যিক যখন “চরিত্রহীনে”র পাণ্ডুলিপি প্রত্যাখ্যান করেন, তখন মনে মনে তিনি অল্প আহত হন নি। অথচ একখানি পত্রে তিনি নিজেই “চরিত্রহীন”কে বলেছেন ‘বখাটে উপন্যাস।’

 তাঁর অভিমানের আর একটি দৃষ্টান্ত দিই। বোধ করি প্রেসিডেন্সি কলেজের একটি ছাত্রসভায় বক্তৃতা দিতে উঠে বঙ্কিমচন্দ্রকে তিনি ‘সেকেলে বঙ্কিম’ ব’লে উপহাস করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের অপরাধ, তিনি নাকি মামুলী প্রথায় পুণ্যের জয় ও পাপের পরাজয় দেখাবার জন্যেই গোবিন্দলালকে দিয়ে রোহিণীকে হত্যা করিয়েছেন প্রভৃতি। একখানি পত্রিকায় আমি তাঁর এই উক্তির প্রতিবাদ করি এবং দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখাই, শরৎচন্দ্রে চেয়ে বঙ্কিমচন্দ্র বেশী সেকেলে নন, কারণ শরৎচন্দ্রও একাধিক উপন্যাসে পাপের পরাজয় দেখাতে ছাড়েন নি এবং তাঁর কোন কোন নায়িকা পাপের জন্যে মৃত্যুর চেয়েও কঠিন দণ্ড ভোগ করেছে। শরৎচন্দ্র আমার প্রতিবাদের জবাব দিলেন না বটে, কিন্তু এত বেশী রেগে গেলেন যে, প্রায় এক বৎসর ধ’রে আমার সঙ্গে দেখা হ’লেও ভালো ক’রে কথা কইতেন না। কিন্তু তিনি বেশী দিন মনের ভিতরে কারুর বিরুদ্ধে রাগ পুষে রাখতে পারতেন না। তাই আবার আমাদের মনের মিলনে বাধা হয় নি।

১৯৫