পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 শরৎচন্দ্রের দুই তিনটি ছোটগল্প বাজার সরগরম ক’রে তুলতেই প্রত্যেক পত্রিকার সম্পাদকই তাঁকে লেখকরূপে লাভ করবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে নূতন রচনা না পেয়ে সকলে এখানে-ওখানে খোঁজ নিতে লাগলেন, তাঁর কোন পুরানো লেখা পাওয়া যায় কিনা? একাধিক পুরাতন রচনার সন্ধান পাওয়া গেল এবং সেগুলি একে একে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হ’তে লাগল। তাঁর অজ্ঞাতসারেই।

 শরৎচন্দ্রের একাধিক পত্র পাঠ করলেই বেশ বোঝা যায়, এ জন্যে তিনি কম বিরক্ত হন নি। তাঁর দুই একটি মন্তব্য এখানে উদ্ধার করছি: ‘আমার ছেলেবেলার ছাইপাঁশ ছাপিয়ে আমাকে যে কত লজ্জা দেওয়া হচ্ছে এবং আমার প্রতি কত অন্যায় করা হচ্ছে তা আমি লিখে জানাতে পারি নে। সমাজপতি (সুরেশচন্দ্র) সমজদার লোক হয়ে, কেমন ক’রে যে ঐ ছাই ছাপালেন আশ্চর্য!’

 তাঁকে না জানিয়েই “ভারতী”তে বেনামে যখন “বড়দিদি প্রকাশিত হয়, তখন কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে, সেটি হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের রচনা। কিন্তু “বড়দিদি” সম্বন্ধে শরৎচন্দ্রের নিজের ধারণা অতটা উচ্চ ছিল না। তাঁর মতে ঐ রচনাটি ‘মন্দ হয় নাই। তবে, ওটা বাল্যকালের রচনা, ছাপানো না হইলেই বোধ করি ভাল হইত।’

 শরৎচন্দ্রের ধারণা ভ্রান্ত নয়। তাঁর রচনার জনপ্রিয়তা দেখে সম্পাদকেরা হ্রস্ব-দীর্ঘ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন—এমন কি সুরেশচন্দ্র সমাজপতির মত উচ্চশ্রেণীর সম্পাদকও। তাই শরৎচন্দ্রের নূতন রচনা থেকে বঞ্চিত হয়ে তাঁরা তাঁর প্রথম বয়সের অপরিপক্ক রচনাবলী নিয়েই কাড়াকাড়ি করতে লাগলেন। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এদের কতকগুলি আখ্যানবস্তু চলনসই

১৯৬