পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

স্যর হেনরি আর্ভিংয়ের অভিনয় দেখেছি। তিনি গিরিশবাবুর চেয়ে ভালো অভিনয় করতেন না।’

 দ্বিজেন্দ্রলাল আরো বলেছিলেন, ‘করুণাময়ের ভূমিকায় আমি গিরিশবাবুর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলুম। যেখানে আত্মহত্যায় উদ্যত করুণাময় শূন্যে হাত বাড়িয়ে গলায় দেবার দড়ি খুঁজছে, গিরিশবাবুর সেখানকার অভিনয়ের তুলনা হয় না।’

 দ্বিজেন্দ্রলাল “প্রফুল্লে” গিরিশচন্দ্রের ‘যোগেশ’ দেখেছিলেন কিনা জানি না, কিন্তু নাটকের সর্বশেষ দৃশ্যে যোগেশরূপে গিরিশচন্দ্রের যে মূর্তি দেখেছি, তা আজ পর্যন্ত আমার মনের ভিতর আঁকা আছে অগ্নি-রেখায়। ‘আমার সাজানো বাগান শুকিয়ে গেল’ বলবার সময়ে তাঁর চোখে অশ্রু থাকত না, কিন্তু মনে হ’ত সে দুটো পাথরে গড়া চোখ— চরম শোকে প্রস্তরীভূত হয়ে গিয়েছে! অর্ধেন্দুশেখর যোগেশের ভূমিকায় এই দৃশ্যে নিজের অক্ষমতা বুঝে, দুই হাতে চোখ ঢেকে মাটির উপরে ব’সে পড়তেন।

 “প্রফুল্ল” দেখবার পর আমার আর তর সইল না। দু’একদিন পরেই অপরাহ্ণকালে গিয়ে হাজির হলুম গিরিশচন্দ্রের বাগবাজারের বাসভবনে। এখানে আর একটি কথা গোপন না করাই উচিত। একেবারে নিঃস্বার্থভাবেই আমি সেদিন ‘হিরো ওয়ারসিপ’ বা মহাপুরুষার্চন করতে যাই নি—সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলুম “রাণীদুর্গাবতী” নামে স্বলিখিত নাটকের পাণ্ডুলিপি। মনের খেয়ালে আমি তখন মাঝে মাঝে নাটক রচনার চেষ্টা করতুম। এখন বুঝেছি, সে সব নাটক হয়েছিল অমৃতলালের ভাষায় ‘না-টক না-মিষ্টি’।

 একটি ফর্দা জমি পেরিয়ে গিরিশচন্দ্রের বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করলুম। শুনলুম তিনি বাহির-বাটীর দ্বিতলে বিশ্রাম করছেন। অতবড় নাট্যকার ও অতবড় অভিনেতা আমার মত অনাহূত

২৩