পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

নিত্য-দৃষ্ট সংসারে সাধারণ মেয়ে-পুরুষরা যে-ভাবে কথাবার্তা কয়, গিরিশচন্দ্র তাঁর নাটকীয় পাত্র-পাত্রীর মুখে ঠিক সেইরকম ভাষাই দিতে চাইতেন এবং রঙ্গালয়ের নাট্যকারের পক্ষে তাই করাই উচিত ব’লে মনে হয়। বার্নার্ড শ পর্য্যন্ত মত প্রকাশ করেছেন: অভিনয়ের নাটকের পক্ষে উচ্চশ্রেণীর সাহিত্যরস হচ্ছে মারাত্মক।

 ক্ষীরোদপ্রসাদ ও দ্বিজেন্দ্রলাল অলঙ্কৃত ভাষা ও কাব্যরসের পক্ষপাতী ছিলেন, তাই তাঁদের নাটকগুলিও হয়েছে অপেক্ষাকৃত পাঠোপযোগী। কিন্তু এ কথা সকলেই জানেন এবং মানেন যে, নাট্যকার হিসেবে তাঁদের আসন গিরিশচন্দ্রের নীচে।

 বালকবয়স পার হলুম, রঙ্গালয়ে গিরিশচন্দ্রের নাটকের অভিনয় দেখলুম—কেবল নাটকের নয়, তাঁর নিজেরও অভিনয়—সীতারাম, করুণাময়, করিম চাচা ও বীরেন্দ্র সিংহের ভূমিকায়। নাট্যসাহিত্যে এবং নটচর্যায় তাঁর সমান অসাধারণতা দেখে আমার বিস্ময়ের সীমা রইল না। তারপর মিনার্ভা থিয়েটার ঘোষণা করলেন মাত্র এক রাত্রির জন্যে “প্রফুল্লে”র পুনরভিনয়। তারিখ ঠিক স্মরণ করতে পারছি না, তবে আমি তখন তরুণ যুবক। সাগ্রহে অভিনয় দেখতে ছুটলুম। গিরিশচন্দ্র ‘যোগেশ’, অর্ধেন্দুশেখর ‘রমেশ’, দানীবাবু ‘সুরেশ’, স্বর্গীয় তিনকড়ি ‘জ্ঞানদা’, সুশীলাবালা ‘প্রফুল্ল’। প্রেক্ষাগৃহে জনতারণ্য। কষ্টেসৃষ্টে একখানি আসন সংগ্রহ করলুম। যোগেশের ভূমিকায় গিরিশচন্দ্র যে অমৃতায়মান অভিনয় করলেন তা একেবারেই বর্ণনাতীত—অদ্যাবধি তার তুলনা খুঁজে পাই নি— এদেশে তো নয়ই, অন্য কোন দেশেও পাওয়া যায় ব’লে বিশ্বাস করি না।

 দ্বিজেন্দ্রলালের নিজের মুখেই এই উক্তি শুনেছি: ‘বিলাতে জন্মালে গিরিশবাবু নিশ্চয়ই ‘স্যর’ উপাধিতে ভূষিত হতেন। আমি

২২