পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

রচনায় এই কৃত্রিমতা ছিল না, তার সর্বত্রই প্রকাশ পেয়েছে লেখিকার সুমধুর নারীত্ব। বর্তমান কালে শ্রীমতী নিরূপমা দেবীর রচনার মধ্যেও এই গুণটি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করি।

 “ভারতীর” সম্পাদিকারূপে তিনি বহু নবীন লেখক তৈরি ক’রে গিয়েছেন। তখনকার অধিকাংশ উদীয়মান লেখক নানাদিক দিয়ে তাঁর কাছে ঋণী— এখানে তাঁদের নাম দেবার চেষ্টা করলুম না, কারণ সে ফর্দ হবে অত্যন্ত দীর্ঘ। আজকালকার নবীন লেখকরা কলম ধ’রেই দক্ষিণা দাবি করেন। কিন্তু সে যুগে যাঁরা অল্পবিস্তর খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাঁদেরও সাহিত্য-সেবা ছিল স্বার্থহীন। পারিশ্রমিক তো দূরের কথা, তখনকার “ভারতী”, “সাহিত্য”, “প্রদীপ”, “সাধনা”, “বঙ্গদর্শন” (নবপর্যায়) ও “প্রবাসী” প্রভৃতি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় স্থানলাভ করতে পারলেই শক্তিশালী নবীন লেখকরা নিজেদের ভাগ্যবান ব’লে মনে করতেন। এই শ্রেণীর লেখকরা তখন বোধ হয় সব চেয়ে বেশী উৎসাহ ও সহানুভূতি লাভ করতেন স্বর্ণকুমারীর কাছ থেকেই। অন্ততঃ নিজের কথা তো জানি, কখনো মুখে এবং কখনো বা পত্রে তাঁর কাছ থেকে যে কত উৎসাহ ও কত মূল্যবান উপদেশ পেয়েছি, সে কথা আজও ভুলতে পারি নি। তখন আমার বাড়ী থেকে বালীগঞ্জে আসা-যাওয়ার পথ সুগম ছিল না এবং টেলিফোন প্রভৃতিরও এত সুবিধা ছিল না, কিন্তু প্রতি মাসে অন্ততঃ চারপাঁচখানি পত্র লিখে আমার সঙ্গে তিনি সংযোগ স্থাপন করতেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তখনকার অন্যান্য যে সব উদীয়মান লেখক স্বর্ণকুমারীর সংসর্গে এসেছিলেন তাঁরাও একবাক্যে আমার উক্তিরই প্রতিধ্বনি করবেন। কারণ প্রত্যেক নবীন লেখককেই তিনি সমান ভালোবাসতেন। “ভারতী”তে আশ্রয় পেয়েই আমি সর্বপ্রথমে পাঠকসমাজের দৃষ্টি

৩০