পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তিন

 বাংলাদেশে প্রথম আধুনিক উপন্যাস “দুর্গেশনন্দিনী” রচনা ক’রে বঙ্কিমচন্দ্র বিস্মিত করেছিলেন বাঙালীদের। স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস “দীপনির্বাণ”ও বাংলাদেশে অল্প উত্তেজনার সৃষ্টি করে নি। কারণ ওখানি হচ্ছে বাংলাদেশে মহিলা-রচিত প্রথম উপন্যাস। বোধকরি তা রচিত হয় “দুর্গেশনন্দিনীর” কিছুকাল পরেই; তবে এ-বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।

 বাঙালীদের মধ্যে কেবল প্রথম মহিলা ঔপন্যাসিক ব’লেই স্বর্ণকুমারী দেবীর এত নাম নয়। তাঁর রচনা-শক্তি ছিল বহুধা বিভক্ত। তিনি উপন্যাস লিখেছেন, ছোট গল্প লিখেছেন, নাটক লিখেছেন, বিদ্যালয়ের পাঠ্য পুস্তক লিখেছেন, গান লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন এবং বহুকাল ধ’রে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পত্রিকা “ভারতী” সম্পাদনা করেছেন।

 তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের দিদি। রবীন্দ্রনাথের আরো কয়েকজন অগ্রজ রচনাশক্তির জন্যে খ্যাতিলাভ করেছিলেন বটে, কিন্তু তাঁরাও স্বর্ণকুমারীর মত সাহিত্যের নানা বিভাগে হস্তার্পণ করতে পারেন নি। তরুণ বয়স থেকে প্রাচীন বয়স পর্যন্ত তাঁর প্রায় সারা জীবনটাই কেটে গিয়েছিল সাহিত্য-সাধনার ভিতর দিয়েই।

 এমন অনেক মহিলা লেখিকা আছেন যাঁদের রচনার মধ্যে কৃতিত্বের প্রমাণ থাকলেও নারীত্বের পরিচয় পাওয়া যায় না। বোধ হয় তাঁরা মনে মনে নিজেদের পুরুষের সমকক্ষ ভেবে সাবধানে আপন আপন নারীত্বকে গোপন রাখবার চেষ্টা করেন। স্বর্ণকুমারীর

২৯