পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

খাবার না খেয়ে ফিরি নি। তাঁর কড়া হুকুম ছিল, যাবার আগে তাঁকে চিঠি লিখে জানাতে হবে। একবার কোন খবর না দিয়ে গিয়ে হাজির হয়েছিলুম ব’লে তাঁর সে কি রাগ, কি ভর্ৎসনা! বললেন, ‘এখানে কি খাবারের দোকান আছে, এখন তোমাকে কি খাওয়াই বল তো? কোন খবর পাই নি, তোমার জন্যে খাবারও তৈরি ক’রে রাখি নি।’ তখনকার বালীগঞ্জে এখনকার মত সারি সারি খাবারের দোকান ছিল না।

 আমি বললুম, ‘যেদিন আসি, সেইদিনই তো খাবার খেয়ে যাই, একদিন না-হয় নাইই বা খেলুম!’

 তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘না, ও-সব আমি পছন্দ করি না। এবার খবর না দিয়ে এলে আমি তোমার সঙ্গে দেখাই করব না।’

 এমনি আদর-যত্ন ও মিষ্ট ব্যবহার তাঁর কাছ থেকে লাভ করতেন প্রত্যেক নবীন লেখকই, তিনি কেবল মৌখিক উপদেশ দিয়েই কর্তব্য শেষ করতেন না। তাঁর বাইরে ছিল নব্য বাংলার হাল-ফ্যাসনের সাজ, কিন্তু মনে মনে ছিলেন তিনি চিরন্তন বাংলার খাঁটি গৃহলক্ষ্মীর মত।

 রবীন্দ্রনাথের একটি আশ্চর্য অভ্যাস ছিল। লোকের সঙ্গে আলাপ করবার সময়ে একাসনে একভাবে স্থির হয়ে ব’সে তিনি কাটিয়ে দিতে পারতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই অভ্যাস ছিল স্বর্ণকুমারীরও। তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেও তাঁকে একটু এদিকে বা একটু ওদিকে ফিরে বসতে দেখিনি। তাঁর কোন দৈহিক চাঞ্চল্য ছিল না, প্রসন্নমুখের দৃষ্টি ছিল প্রশান্ত, তিনি কথা কইতেন ধীরে ধীরে মৃদু স্বরে এবং তাঁর গলার আওয়াজও ছিল সুমিষ্ট।

 স্বর্ণকুমারীর বাড়ীতেই মাঝে মাঝে আর একটি হাস্যমুখ তরুণের সঙ্গে দেখা হ’ত, সেই পরিচয় পরে পরিণত হয় বন্ধুত্বে।

৩২