পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

তখন ছিলেন তিনি প্রাচ্য চিত্রকলার শিক্ষার্থী। এখন তাঁর নাম ভারতবিখ্যাত। তিনি হচ্ছেন শ্রীঅসিতকুমার হালদার। তিনি কেবল লক্ষ্ণৌ চিত্র-বিদ্যালয়ের সর্বাধ্যক্ষ নন, তাঁর হাতে কলমও চলে ভালো।

 সুধাকৃষ্ণ বাগচী নামে এক যুবক স্বর্ণকুমারীকে একবার ভারি বিপদে ফেলেছিল। তার লেখবার সাধ ছিল, কিন্তু সাধ্য ছিল না। তার একখানা পা ছিল কাঠের আর সে যা তা কথা কইতে পারত অনর্গল। কেমন ক’রে সে স্বর্ণকুমারীর স্নেহলাভ করে, তিনি তাকে নিজের বাড়ীতেই আশ্রয় দেন। হঠাৎ পূজার “ভারতী”তে সুধাকৃষ্ণের এক রচনা দেখে আমার চক্ষু স্থির। লেখাটি বঙ্কিমচন্দ্রের “কমলাকান্তের দপ্তর” থেকে বেমালুম চুরি! পত্রে সে কথা স্বর্ণকুমারীকে জানালুম। উত্তরে তিনি লিখলেন—‘হেমেন্দ্র, লজ্জায় আমার মুখ দেখানো দায় হয়ে উঠেছে। হয়তো সবাই ভাবছে “ভারতী”র মত পত্রিকার সম্পাদিকা বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা পড়েন নি! কিন্তু কি করব বল, বঙ্কিমচন্দ্রের রচনার ল্যাজা-মুড়ো বাদ দিয়ে সুধাকৃষ্ণ এমনভাবে আমাকে শোনালে, আমি কিছুই ধরতে পারি নি। সুধাকৃষ্ণকে আমার বাড়ী থেকে চ’লে যেতে বলেছি।’ এই সুধাকৃষ্ণ বড় গুণী ছেলে। পরে সে “জাহ্নবী”র (নবপর্যায়) সম্পাদক হয় এবং আমার একখানি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি চুরি ক’রে নিজের নামে পুস্তকাকারে ছাপিয়ে দেয়। সে এখন ইহলোকে নেই।

 স্বর্ণকুমারী একবার আমার উপরেও রাগ করেছিলেন। প্রায় সাঁইত্রিশ বৎসর আগেকার কথা। গোমো জংসনে ডি-কষ্টা নামে এক অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান ভদ্রলোকের মস্ত একখানি বাংলো ছিল, সেইখানে গিয়ে আমি দুই মাসকাল কাটিয়ে এসেছিলুম। বাংলো

৩৩