পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

খানির অবস্থান বড় চমৎকার, একেবারে আমার মনের মত। কাছে লোকালয় নেই। চারিদিকে নিবিড় বনানীর মর্মরমুখর শ্যামলতা। বাংলোর হাতা যেখানে শেষ হয়েছে, সেইখান থেকেই আরম্ভ হয়েছে পাহাড়ের পর পাহাড়, এবং তাদের কোল ঘেঁষে চ’লে গিয়েছে নদীতে যাবার পায়ে হাঁটা পথ। আরো দূরে তাকালে সর্বদাই দেখা যায় মেঘচুম্বী পরেশনাথ পাহাড়, শিখরে যার শুভ্র মন্দিরমুকুট। চোখের সামনেই দেখতুম বনে বনে মৃগযুথের নয়নমোহন বিচরণ। সেখান থেকে ফিরে এসে স্বর্ণকুমারীর কাছে বাংলোখানির বর্ণনা ক’রে বলেছিলুম, বাড়ীখানা ডি-কষ্টা সাহেব বিক্রী করতে চান। আমার মুখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুনে বাংলোখানি কেনবার জন্যে তিনি উৎসাহিত হ’য়ে উঠলেন। তার কয়েকদিন পরেই স্বয়ং বাংলোখানি দেখে এসে তিনি আমাকে যে চিঠি লিখেছিলেন তার মর্মার্থ হচ্ছে এই: ‘হেমেন্দ্র, তুমি কি আমাকে ডাকাতের হাতে সমর্পণ করতে চাও, না হিংস্র জন্তুর জঠরে পাঠাতে চাও? যা দেখে এলুম, তা বাংলো না বাঘের বাসা? পালিয়ে আসবার পথ পাই না। এ তোমার সাংঘাতিক কবিত্ব!’

 স্বর্ণকুমারী সম্বন্ধে আরো অনেক গল্প বলতে পারি, কিন্তু আপাততঃ এখানে স্থানাভাব। কেবল তাঁর সঙ্গে শেষ-দেখার কথা ব’লে এ-প্রসঙ্গ শেষ করব।


 শুনেছি কুচবিহারের রাজকন্যার সঙ্গে তিনি নিজের পুত্রের বিবাহ দিয়েছিলেন ব’লে তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, কারণ তাঁর পরিবারের কেউ যে ব্রাহ্মণেতর জাতির সঙ্গে বিবাহের সম্পর্ক স্থাপন করেন, এটা তিনি পছন্দ করতেন না। কথাটা কতখানি সত্য তা জানি না। কিন্তু স্বর্ণকুমারীর

৩৪