পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

মতামত প্রকাশ করেন এবং এক-একবার আলবোলার নলে মুখ লাগিয়ে ধূমপান করতে থাকেন।

 এক জায়গায় চারুশীলার ভূমিকায় একটি গানে ‘আমার হৃদয়দোলা দোদুল দোলে’ এই জাতীয় কি কথা ছিল।

 অমৃতলাল জিজ্ঞাসা করলেন, ‘চারু, হৃদয়-দোলা কেমন ক’রে দোলে দেখাও তো!’

 চারুশীলা লাজুক হাসি হেসে বললেন, ‘আজ্ঞে, আপনি দেখিয়ে দিন না!’

 অমৃতলাল তখনি দেখিয়ে দিলেন, তাঁর জরাজীর্ণ দেহেও সেই সরস ভঙ্গি হ’ল অপূর্ব।

 তারপর ১৩৩৪ সালের শেষের দিকে মিনার্ভা থিয়েটারে যখন অমৃতলালের শেষ নাটক “যাজ্ঞসেনী” খোলবার আয়োজন হয়, তখন তার মহলায় আমি নিয়মিতরূপে হাজির থাকতুম। সেই সময়েই তাঁর মহলা দেবার পূর্ণশক্তি আমি বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলুম। কি পুরুষ-ভূমিকা, কি নারী-ভূমিকা, কি কবিতায়, কি গদ্যে সংলাপ, কি অঙ্গবিন্যাস, কি ভাবাভিব্যক্তি,—প্রত্যেক দিকেই থাকত তাঁর তীক্ষ্ণদৃষ্টি এবং প্রত্যেক বিষয়টি তিনি তাঁর নিজের দেহের ও কণ্ঠস্বরের সাহায্যে বিশদ ক’রে তুলতে পারতেন— এমন কি আলোকপাত, দৃশ্যপট ও অঙ্গ সংস্কার বা দেহ-সজ্জা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ না ক’রে ছাড়তেন না।

 “যাজ্ঞসেনী”র মহলার সময়ে এক-একদিন তাঁর সঙ্গে ছোটখাটো আলোচনা করবারও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হইনি।

 একদিন কথাপ্রসঙ্গে বললুম, ‘আপনি এ পালাটিতে মাঝে মাঝে গদ্য, আবার মাঝে মাঝে ভাঙা অমিত্রাক্ষর ছন্দও ব্যবহার

৩৯