পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 —‘আজ্ঞে না, নিজের চোখে দেখেই বলছি। আপনিও “পদ্মাবতী” নাটক খুঁজলে অন্ততঃ নয়-দশ জায়গায় ভাঙা অমিত্রাক্ষর ছন্দের নমুনা দেখতে পাবেন।’

 অমৃতলাল উত্তেজিত স্বরে বললেন, ‘দেখব, আজই বাড়ীতে গিয়ে দেখব। কি আশ্চর্য, চোখের সামনে থেকেও এত-বড় কথাটা আজ পর্যন্ত গুপ্তকথা হয়েই আছে, আমাদের কারুরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে নি!’

 অমৃতলাল ছিলেন অত্যন্ত সামাজিক মানুষ। গত যুগের প্রায় প্রত্যেক অভিনেতাই—এমন কি গিরিশচন্দ্র ও অর্ধেন্দুশেখর পর্যন্ত— সত্যকার সামাজিক অনুষ্ঠানকে সাধ্যমত পরিহার ক’রেই চলতেন। কিন্তু অমৃতলালকে দেখেছি আমরা বহু সভা-সমিতিতে এবং সাহিত্যিক ও শিল্পীদের বৈঠকে। যে কোন সভা তাঁর উপস্থিতিতে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠত, কারণ রসালো ভাষায় বক্তৃতা দেবার ক্ষমতা ছিল তাঁর অসামান্য। ছোট-বড় বৈঠকেও তাঁর মুখ, দিয়ে নির্গত হ’ত যে বাক্য-স্রোত, তা রসের স্রোত বললেও অত্যুক্তি হবে না। তিনি একাধারে ছিলেন সুরসিক ও সুপণ্ডিত। তাই তাঁর লঘু কৌতুক-ভাষণের মধ্যেও লাভ করা যেত যথেষ্ট চিন্তার খোরাক।

 অধিকাংশ স্থলেই লক্ষ্য করেছি, গত যুগের বড় বড় বা ছোট ছোট অভিনেতারা আধুনিক যুগের অভিনেতাদের তেমন আমল দিতে চান না। কিন্তু অমৃতলাল ছিলেন একেবারেই এ দলের বাইরে। এ কালের অভিনেতাদেরও তিনি অত্যন্ত স্নেহ ও সহানুভূতির চোখে দেখতেন এবং নিজে পুরাতন ধারায় অভ্যস্ত হয়েও কোন দিন তিনি নবযুগের অভিনয়-ধারাকে নিন্দা বা ব্যঙ্গ করতেন না। তিনি সবচেয়ে বেশী প্রশংসা করতেন নবযুগের

৪১