পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

প্রবর্তক শিশিরকুমারকেই। ১৩১৫ সালের পয়লা আশ্বিনে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ভবনে অর্ধেন্দুশেখরের যে স্মৃতি-সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে বক্তৃতা দিতে উঠে অমৃতলাল বলেছিলেন, ‘পার্টে জীবন দেবার ক্ষমতা ছিল তার (অর্ধেন্দুর) অপূর্ব। এ যুগে দেখতে পাই তা একমাত্র শিশিরের আছে। ‘ষোড়শী’র জীবানন্দের মত wretched part-এ dignity দেওয়া একমাত্র শিশিরেরই সম্ভব।’ “নাট্যমন্দিরে” শিশিরকুমারের বৈঠকে এসেও মাঝে মাঝে তাঁকে আসন গ্রহণ করতে দেখেছি।

 সুরাদেবীর প্রসাদে অমৃতলালের অরুচি ছিল না। একাধিকবার তাঁর কাছে গিয়ে বুঝেছি, তিনি মদ্যপান করেছেন, কিন্তু কখনো তাঁকে মত্ত অবস্থায় দেখিনি। তবে দ্বিজেন্দ্রলালের মত আমাদের চোখের সামনে বসে কোন দিন তিনি সুরার প্রসাদ গ্রহণ করেন নি। যে রামকৃষ্ণদেবকে গিরিশচন্দ্র সাক্ষাৎ ভগবানের অবতার ব’লে পূজা করতেন, তাঁর এবং দক্ষিণেশ্বরের অন্যান্য ভক্তগণের সম্মুখেও তিনি অম্লানবদনে সুরাপান করতে লজ্জিত হন নি। কিন্তু অমৃতলালের বোধ করি কিঞ্চিৎ চক্ষুলজ্জা ছিল। যদিও কাগজেকলমে তিনি এ গোপনতাকে প্রশ্রয় দেন নি। “অমৃত-মদিরা”য় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন:

‘আমি আর গুরুদেব যুগল ইয়ার,
বিনীর বাড়ীতে গিয়ে খেতাম বিয়ার।’

 ‘গুরুদেব’ হচ্ছেন গিরিশচন্দ্র। ‘বিনী’ হচ্ছেন আগেকার সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিনোদিনী।

 “যাজ্ঞসেনী” অমৃতলালের কেবল শেষ নাটক নয়, শ্রেষ্ঠ নাটক। ঐ পালাটি অভিনীত হবার কিছুদিন পরেই তিনি পৃথিবীর নাট্যশালা থেকে বিদায় গ্রহণ করেন।

৪২