পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

ভাষা (যা তাঁর প্রবন্ধ ও কবিতাতেও পাওয়া যায়), নূতন ধরণের ‘ষ্টাইল’ বা ‘ভঙ্গী’ এবং অভিনব কৌশলে চরিত্র-সৃষ্টি প্রভৃতির জন্যে সেগুলি এমন অনন্যসাধারণ হয়ে উঠেছে যে, উচ্চ বা নিম্ন দুই শ্রেণীকে সমানভাবে আকৃষ্ট করে। তাঁর নাটকগুলি আজ দীর্ঘকাল পরেও জনপ্রিয়তা থেকে বঞ্চিত হয়নি। মোটকথা, রবীন্দ্রনাথ না থাকলে আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তিনিই সর্বপ্রধান লেখক ও নায়ক রূপে গণ্য হ’তে পারতেন। দুর্ভাগ্যক্রমে রবীন্দ্রনাথের মত দ্বিজেন্দ্রলালও দীর্ঘজীবনের অধিকারী হন নি। মাত্র পঞ্চাশ বৎসর পার হয়েই তাঁকে ইহলোক থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। আরো কিছুকাল জীবিত থাকলে নিশ্চয়ই তিনি আরো কত সোনা ফলাতে পারতেন সাহিত্যের নব নব ক্ষেত্রে।

 বোধ করি ১৯০৭ খৃষ্টাব্দ। “অর্চনা” পত্রিকায় দ্বিজেন্দ্রলালের মিনার্ভায় অভিনীত নূতন নাটক “দুর্গাদাসে”র একটি নিন্দাপূর্ণ সমালোচনা প্রকাশিত হয় এবং নাট্যকারের পক্ষ নিয়ে আমি তার প্রতিবাদ করি। দ্বিজেন্দ্রলালের কাছে আমার নাম নিশ্চয়ই তখন অপরিচিত ছিল, যদিও তার কিছুকাল আগেই ব্যক্তিগত ভাবে আমি তাঁর সঙ্গে পরিচিত হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলুম। তিনি তখন সুকিয়া স্ট্রীটে (এখন কৈলাস বসু স্ট্রীট) একটি বাসাবাড়ীতে থাকতেন। সেইখানে ‘জাহ্নবী’ সম্পাদক স্বর্গীয় নলিনীরঞ্জন পণ্ডিতের সঙ্গে দুইদিন গিয়ে দেখেছিলুম একটি দোহারা চেহারার গৌরবর্ণ, শান্তগম্ভীর, সংযতবাক, প্রিয়দর্শন পুরুষকে। তিনিই দ্বিজেন্দ্রলাল। নলিনীবাবু নিজের পত্রিকার জন্যে তাঁর কাছ থেকে একটি হাসির গান চান। তিনি বললেন, ‘আমি তো হাসির গান লিখি না। যদি ‘সিরিয়ো-কমিক’ কবিতা চান, দিতে পারি।’ নলিনীবাবু তাইতেই রাজি। তাঁর অনুরোধে আর একদিন গিয়ে

88