পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 মণিলালের মুখে সেই নাটকের কথা শুনে ম্যাডানদের কর্ণধার (পরে “কালী ফিল্মসে”র মালিক) শ্রীপ্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় নাটকের পাণ্ডুলিপি আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন। দুই-চারদিন পরেই শুনলুম, নাটকখানি কর্ণওয়ালিশ থিয়েটারে অভিনয়ের জন্যে মনোনীত হয়েছে।

 ভূমিকালিপি বিলি হয়ে গেল। মহলা আরম্ভ হয় হয়, এমন সময়ে ক্ষীরোদপ্রসাদ এসে হাজির। অত্যন্ত বিচলিত ভাব, সকাতর মুখ। মণিলালকে ডেকে তফাতে নিয়ে গিয়ে উত্তেজিত ভাবে কি সব ব’লে আবার চ’লে গেলেন দ্রুতপদে।

 মণিলাল আমার কাছে এসে হাসতে হাসতে বললেন, ‘হেমেন্দ্র, ক্ষীরোদবাবুকে না জানিয়ে তোমার নাটক নেওয়া হয়েছে বলে উনি অভিমান করেছেন। তুমি কাল ওঁর বাড়ীতে গিয়ে নাটকখানি শুনিয়ে এস, তাহ’লেই উনি ঠাণ্ডা হয়ে যাবেন।’

 মণিলালের কথামতই কাজ করলুম। আমাকে দেখেই ক্ষীরোদপ্রসাদের মুখ হাস্যোজ্জ্বল হ’য়ে উঠল। সাদরে নীচের একটি ছোট ঘরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে খুব মন দিয়ে নাটকখানি শ্রবণ ক’রে দু-একটি জায়গা একটু বদলে দিতে বললেন। আমিও রাজি হলুম।

 তারপর তিনি করুণ স্বরে বললেন, ‘হেমেন্দ্রবাবু, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে।’

 সবিস্ময়ে বললুম, ‘ষড়যন্ত্র! কিসের ষড়যন্ত্র?’

 —‘ম্যাডানদের সাঙ্গোপাঙ্গরা আমাকে তাড়াতে চায়। তাই ওরা আপনার নাটক নিয়েছে।’

 —‘আপনার সঙ্গে আমার তুলনা? আমি তো নাট্যকারই নই!’

 —‘না হেমেন্দ্রবাবু, ওরা আমার মত বুড়ো নাট্যকার চায় না। ওরা চায় আধুনিক নাট্যকার। এ সব হচ্ছে ষড়যন্ত্র।’

৫৫