পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

প্রসাদ ঐ কথারই পুনরাবৃত্তি ক’রে আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন— তাঁর দুই চক্ষে অস্বাচ্ছন্দ্য। তখন ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারলুম। আমিও একজন লেখক, আমার সামনে তিনি তাঁর নাটক পড়তে নারাজ—Plagiarism বা রচনাচৌর্যের ভয়ে! তাড়াতাড়ি উঠে পড়লুম, অপরেশচন্দ্র মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগলেন। রঙ্গালয় জায়গা ভালো নয়। এখানে কারুর উপরে কারুর বিশ্বাস নেই।

 শিশিরকুমার যখন ম্যাডানদের দল ত্যাগ করেছেন, তখন স্বর্গীয় সাহিত্যিক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের “মুক্তার মুক্তি” নামে একখানি চমৎকার নাটিকা ওখানে অভিনীত হয়। তারপর থেকে কর্ণওয়ালিশ থিয়েটারে কিছুদিন ধ’রে আমাদের দৈনিক আসর বসত। অনেক সাহিত্যিক ও শিল্পী বন্ধু আসতেন। ক্ষীরোদপ্রসাদও প্রায় আসা-যাওয়া করতেন, কারণ তিনি ছিলেন ম্যাডানদের বৈতনিক নাট্যকার। মুখে তাঁর সর্বদাই হাসিখুসি। মাঝে মাঝে থিয়েটারওয়ালাদের উপরে চ’টে দপ্ ক’রে জ্ব’লে উঠতেন বটে, কিন্তু একটু পরেই আবার ঠাণ্ডা জল! বজ্র আর বৃষ্টি। নাটক নিয়েও অনেক কথা বলতেন, বেশীর ভাগ নিজের নাটকেরই প্রসঙ্গ। সর্বদাই মশগুল হয়ে থাকতেন যেন স্বকীয় কল্পনালোকে।

 একদিন স্বর্গীয় কবিবর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত আমার হাতে ভিক্টর হিউগোর একখানি নাটক দিয়ে বললেন, ‘প’ড়ে দেখবেন। ভালো লাগে তো বাংলায় তর্জমা করবেন।’

 নাটকখানি ভালো লাগল। তাকে অবলম্বন ক’রে বাংলায় একখানি নাটক রচনা ক’রে ফেললুম। কোন রঙ্গালয়ের মুখ তাকিয়ে নয়, খেলাচ্ছলে মনের খেয়ালে। রচনাটি বন্ধুমহলে পাঠ করলুম। সকলে সুখ্যাতি করলেন।

৫৪