পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

নাথ বসু ছিলেন ধনবান ও চারুকলাগত প্রাণ। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের “বাংলার ইতিহাস” নামে সুবিখ্যাত প্রকাণ্ড গ্রন্থ তাঁরই অর্থানুকূল্যে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর বাড়ীতে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় আমাদের একটি জমজমাট মজলিস বসত। সেখানে সহরের নামজাদা গাইয়ে-বাজিয়েদের আমন্ত্রণ করা তো হ’তই, তা ছাড়া আমন্ত্রিত হতেন ভারতের অন্যান্য প্রদেশের গুণী ব্যক্তিরাও। বলা বাহুল্য, তাঁরা উপযোগী দক্ষিণারও অভাব অনুভব করতেন না।

 ঐ আসরেই একদিন দেখতে পেলুম একটি চিত্তাকর্ষক মূর্তিকে। শ্যামবর্ণ, বিপুল ও সুদীর্ঘ দেহ। গম্ভীর আনন, প্রশস্ত ললাট, উন্নত নাসা, ভাবব্যঞ্জক দৃষ্টি। দীর্ঘ কেশ, মুখে গোঁপদাড়ী। মাথায় টুপী, পরোনে পশ্চিমা মুসলমানের পোষাক। বয়স ষাটের কম নয়। সাজসজ্জা দস্তুরমত পরিপাটি ও সৌখীন। শুনলুম উনিই হচ্ছেন ওস্তাদ করমতুল্লা খাঁ। আসরের সবাই ডাকছেন খাঁ-সাহেব ব’লে।

 প্রথমে গায়কদের গান চলল, খাঁ-সাহেব বাক্যহীন মুখে একেবারে মূর্তির মত স্থির হয়ে ব’সে রইলেন। রাত সাড়ে নয়টা কি দশটার সময়ে গানের পালা সাঙ্গো হ’লো— সঙ্গে সঙ্গে খাঁসাহেব যেন জাগ্রত হয়ে ন’ড়ে চ’ড়ে ভালো ক’রে বসলেন। আবরণের ভিতর থেকে বেরুলো তাঁর সযত্নে রক্ষিত ও সজ্জিত শরদ। একে একে বাঁধা হ’ল তার। যন্ত্রটিকে বাগিয়ে ধ’রে তিনি সোজা হয়ে উঠে বসলেন, তাঁর মুখমণ্ডল শিল্পীসুলভ প্রতিভায় সমুজ্জ্বল। এতক্ষণ তাঁকে দেখাচ্ছিল সাধারণ মানুষের মত, বীণা হাতে তুলে নিতেই তিনি হয়ে উঠলেন ব্যক্তিত্বে অসাধারণ। তারপর শুরু হ’ল বাজনা।

 সেদিন বীণার যে ভাষা শুনলুম, তা বর্ণনা করবার শক্তি আমার নেই। কলমের রেখা মৌন, সঙ্গীত হচ্ছে ধ্বনিময়। কলম দিয়ে

৬০