পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

আঁকা যায় বড়-জোর শব্দছবি, কিন্তু বিভিন্ন ভাবে বিচিত্র বিভিন্ন তালে ছন্দোময়, বিভিন্ন রাগ-রাগিণীতে উচ্ছ্বসিত সেই মুখর বীণার জীবন্ত ভাষাকে যথাযথরূপে ফুটিয়ে তোলবার ক্ষমতা কোন লেখকের আছে ব’লে মানি না।

 প্রায় মধ্যরাত্রে বীণা হ’ল নীরব। এতক্ষণ সবাই দুনিয়াকে ভুলে বিচরণ করছিলুম সুরের স্বর্গে, হঠাৎ আবার ফিরে এলুম মাটির পৃথিবীতে। খাঁ-সাহেবের উপরে এতটা শ্রদ্ধা হ’ল যে কোনরকম মৌখিক প্রশস্তি জানাবার চেষ্টা করলুম না। শ্রেষ্ঠ আর্ট মানুষকে মুগ্ধ করে, মৌন করে, অভিভূত করে; প্রকৃত শিল্পীর পক্ষে তাইই হচ্ছে যথার্থ অভিনন্দন। ভালো অভিনয় দেখে, ভালো সঙ্গীত শুনে যারা হাততালি বা চেঁচিয়ে বাহবা দেয়, আমি তাদের অরসিক ব’লে মনে করি। হাততালি ও হট্টগোল ফুটবলখেলার মাঠেই শোভা পায়।

 তারপরও খাঁ-সাহেবের বাজনা আবার শুনেছি এবং আবার অভিভূত হয়েছি। তাঁর বীণা প্রতিদিনই বলত নূতন নূতন কাহিনী; প্রতিদিনই আমাদের জন্যে অপেক্ষা ক’রে থাকত নব নব বিস্ময়। খাঁ-সাহেবের পরে কলকাতায় আরো কত ডাকসাইটে শরদ-বাজিয়ে এলেন-গেলেন, তাঁদেরও অনেকের বাজনা শুনেছি। তাঁদেরও তাললয়দুরস্ত নিপুণ হাত, তাঁরাও সৌন্দর্যের ঐশ্বর্য বিলি করতে কুণ্ঠিত নন, কিন্তু করমতুল্লা খাঁ-সাহেবের বীণায় যে কল্পনার বিলাস থাকত, যে মাধুর্যের আবেদন থাকত, যে অভাবিত কারুকুশলতা থাকত, আর কারুর কাছ থেকে তা লাভ করি নি আজ পর্যন্ত। উপভোগের দিক দিয়ে বলতে পারি, তিনি ছিলেন বীণকারদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ বীণকার।

 তাঁর বাসাতেও গিয়েছি অনেকবার আলাপ করতে। যদিও

৬১