পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

তিনি বাংলা জানতেন না, তাঁর ভাষা বুঝতেও আমার কিছু কিছু কষ্ট হ’ত, তবু তাঁর সংলাপ শুনে ও শিল্পীজনোচিত মনোবৃত্তি দেখে অতিশয় আনন্দ অনুভব করতুম। তিনি ছিলেন যেমন সদালাপী, তেমনি নিরহঙ্কার এবং বিনয়ী। শিল্পীরাও যে লেখাপড়ায় পণ্ডিত না হয়েও সংস্কৃতি ও আভিজাত্য প্রকাশ করতে পারেন—যার মূল্য কাঞ্চন-কৌলীন্যের চেয়ে অনেক বেশী, তাঁকে দেখলেই পাওয়া যেত তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। অভ্যাগতদের তিনি আদর করতেও জানতেন। একবার বক্‌রীদের দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি, তিনি জোর করে আমাকে মাংস খাইয়ে দিলেন। সে মোগলাই মাংসের প্রত্যেক খণ্ডের আকার হাতের চেটোর মতন মস্ত এবং অসম্ভব রকম ঘৃতপক্ক ও মসলাজর্জরিত। তা খেতে খুব স্বাদু বটে, কিন্তু উদরপ্রদেশে অবতরণ ক’রে পরে কোন্ উৎপাত উৎপাদন করবে, সেই ভয়ে যথেষ্ট দুশ্চিন্তা নিয়ে বাড়ীতে ফিরতে হয়েছিল।

 যদিও তিনি বীণকার, তবু ভারতীয় উচ্চসঙ্গীতের উপরে ছিল তাঁর অবাধ অধিকার। অথচ এ বিষয় নিয়ে অধিকাংশ প্রখ্যাত ওস্তাদের মত তাঁকে কোনদিন তুচ্ছ গর্বপ্রকাশ ক’রে হাস্যাস্পদ হ’তে দেখি নি। নামজাদা গায়করাও তাঁর কাছে তালিম গ্রহণ করতে কুণ্ঠিত হ’তেন না— যেমন অন্ধ-গায়ক শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র দে।

 এমন একজন অতুলনীয় কলাবিদ্, কিন্তু এই জনবিপুল ও ধনবিপুল কলকাতা নগরে ব’সে তাঁকে ভোগ করতে হ’ত নিদারুণ অর্থ-কষ্ট। পাশ্চাত্য দেশে সামান্য শিস্ দিয়েও লোকে ধনবান হয়, কিন্তু এদেশে জন্মগ্রহণ ক’রে তাঁর মত কালোয়াত অন্ন-বস্ত্র সম্বন্ধেও নিশ্চিন্ত হ’তে পারেন নি!

 আর এক নতুন বৈঠকেও প্রায়ই তাঁর দেখা পেতুম। সেখানে বৈঠকধারী ছিলেন ‘লাইট-হেভি-ওয়েটে’ পৃথিবী-জয়ী কুস্তিগীর,

৬২