পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 এবং হঠাৎ শুনলুম এক “রোমান্সে”র কাহিনী। স্বর্ণকুমারী দেবীর বিদ্যাবতী ও লেখিকা কন্যা সরলা দেবী প্রভাতকুমারের গল্প পাঠ করে তাঁর প্রতি অনুরাগিণী হয়েছেন, শীঘ্রই তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন। প্রভাতকুমার তখন বোধহয় ডাক-বিভাগে কেরাণীগিরি করতেন। নিজেদের পরিবারের যোগ্য ক’রে নেবার জন্যে সরলা দেবীর মাতা-পিতা প্রভাতকুমারকে বিলাতে পাঠাতে চাইলেন। তিনিও চাকরীতে ইস্তফা দিয়ে বিলাতে যাত্রা করলেন ব্যারিষ্টারি শেখবার জন্যে।

 এ-রকম ‘রোমান্স’ বাংলা সাহিত্যসমাজে বড় একটা ঘটে না, সহরের সাহিত্যবৈঠকগুলি কিছুদিন পর্যন্ত সরগরম হয়ে রইল। দেখতে দেখতে তিন চার বৎসর কেটে গেল। প্রভাতকুমার ব্যারিষ্টার হয়ে দেশে ফিরলেন। কিন্তু এরি মধ্যে ব্যাপারটা কি ঘটল ঠিক বোঝা যায় নি, তবে সরলা দেবীর সঙ্গে প্রভাতকুমারের বিবাহ আর হ’ল না! চোখের আড়াল হ’লে প্রাণের আড়াল হয়— বোধ করি সত্য হয়ে দাঁড়াল এই প্রবাদটাই।

 প্রভাতকুমার প্রথমে রংপুরে ও তারপরে গয়ায় গিয়ে কিছুকাল ব্যারিষ্টারি করলেন, তারপর কলকাতায় এসে হ’লেন ল কলেজের অধ্যাপক। সরলা দেবী কিছুকাল “ভারতী” সম্পাদনা ক’রে সাহিত্য-চর্চ্চা প্রায় ছেড়ে দিয়ে পাঞ্জাবে গিয়ে হ’লেন রামভুজ দত্তচৌধুরীর সহধর্মিণী। প্রভাতকুমার কিন্তু সাহিত্য-সাধনা ছাড়লেন না। প্রথমে “প্রবাসী” এবং তারপর অন্যান্য পত্রিকার জন্যে গল্প ও উপন্যাস রচনা করতে লাগলেন। অবশেষে গ্রহণ করলেন “মানসী ও মর্মবাণী”র সম্পাদনার ভার।

 প্রভাতকুমারের গল্পগুলি প্রধানত আখ্যানবস্তু এবং কৌতুককর ঘটনা ও বর্ণনার জন্যে সর্বশ্রেণীর পাঠকদের আকর্ষণ করে।

৭৩