পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

তাঁর ভাষায় প্রসাদগুণ আছে যথেষ্ট, কিন্তু তিনি মার্জিত ও অসাধারণ রচনারীতি ব্যবহার করেন নি, ভাষাকে নানারূপ সুনির্বাচিত অলঙ্কার দিয়েও সাজাতে যান নি। তবে কৌতুক ও হালকা ভাবের সাহায্যে তিনি যে জীবনের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারেন, “প্রবাসী” পত্রিকায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন স্বর্গীয় দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (“ডাঙ্গায় বাঘ ও জলে কুমীর” প্রবন্ধে)।

 “ভারতবর্ষ” প্রকাশের কিছুকাল পরে স্বর্গীয় অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণের সম্পাদকতায় “সঙ্কল্প” নামে একখানি স্বল্পজীবী সুবৃহৎ পত্রিকা প্রকাশিত হয়, আমি তার সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করতুম। যদিও তখনো আমি গ্রন্থকার হইনি, তবে গল্পলেখকরূপে মাসিক সাহিত্যে কিঞ্চিৎ খ্যাতি লাভ করেছি। সেই সময়ে খবর পেলুম, হেদোর ধারে “মানসী”র কার্যাধ্যক্ষ সুবোধচন্দ্র দত্তের বাড়ীতে এসে উঠেছেন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়। এতদিন পর্যন্ত তাঁকে স্বচক্ষে দেখবার সুযোগ পাই নি, সুতরাং এ সুযোগ ছাড়লুম না। কিছু কাল আমিও “মানসীর” দলভুক্ত ছিলুম, সুবোধবাবু আমার বন্ধু, তাই অসঙ্কোচেই তাঁর বাড়ীতে গিয়ে হাজির হলুম।

 একতালার বৈঠকখানায় ব’সে ছিলেন প্রভাতকুমার। দীর্ঘ দেহ, কৃষ্ণ বর্ণ, দাড়ী-গোঁফ কামানো মুখ, শান্ত দৃষ্টি, দোহারা ভারিক্কে চেহারা। বয়সে প্রৌঢ়।

 প্রণাম করলুম। সুবোধবাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রভাতকুমার মৃদুমধুর হেসে বললেন, ‘“সঙ্কল্পে” আপনার ‘কপোতী’ গল্পটি আমি পড়েছি। আমার ভালো লেগেছে।’

 তাঁর মত গুণী লেখকের মুখে সুখ্যাতি শুনে যে খুসি হয়েছিলুম

৭৪