পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

আসরে এসে হাজির হ’তেন স্বর্গীয় মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীশিশিরকুমার ভাদুড়ীশ্রীপ্রেমাঙ্কুর আতর্থী প্রমুখ সুধীবৃন্দ, সে সব দিনে গল্প করতে করতে আমাদের আর হুঁশ থাকত না যে, বেজে গিয়েছে কখন রাত বারোটা। প্রভাতকুমার যখন মন খুলতেন, একেবারে মজলিসী লোক হয়ে উঠতেন। আর কতরকম গল্পই তিনি জানতেন! সাহিত্যের গল্প, অন্যান্য চারুকলার গল্প, বিলাতের গল্প, সাধারণ খোসগল্প। তার উপরে পরম স্নেহভরে সকলকে খাওয়ানো-দাওয়ানো, আদর-আপ্যায়ন। তাও অল্প উপভোগ্য ছিল না। এক-একদিন আলাপ করতে করতে রাত্রি এমন গভীর হয়ে উঠত যে, তিনি আমাকে বাড়ীতে ফিরতে দিতেন না। সেদিন তাঁর সঙ্গেই এক শয্যায় শয়ন ক’রে কাবার হয়ে যেত বাকি রাত্রিটা। এখন সেই সব কথা মনে করি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি— হায়, সাহিত্যজগতে আর প্রভাতকুমারের মতন মানুষ নেই, সে সব সুখের দিন আর ফিরে আসবে না।

 দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রসঙ্গে ব’লেছিলুম, তাঁর সঙ্গে আমার শেষ-দেখা হয়েছিল বারাণসী ঘোষ স্ট্রীট আর কর্ণওয়ালিস স্ট্রীটের সংযোগস্থলে। তারপরেই পেয়েছিলুম সন্ন্যাস রোগে তাঁর মৃত্যুসংবাদ। একদিন বৈকালে ঠিক সেইখানেই দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ দেখলুম চলন্ত ট্রামে ব’সে আছেন প্রভাতকুমার। আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে তিনি একটুখানি হাসলেন। তারপর সেই সন্ধ্যাতেই তিনি সন্ন্যাস রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন শুনে তাড়াতাড়ি তাঁকে দেখতে গেলুম। আমি আর একবার তাঁকে দেখলুম বটে, কিন্তু প্রভাতকুমার আমাকে দেখতে পেলেন না। তিনি তখন মূর্চ্ছিত। সে মূর্ছা আর ভাঙে নি।

 আমার মুখে ঐ দুটি কাহিনী শুনে বিখ্যাত অভিনেতা স্বর্গীয়

৭৮