পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

আমারও ভালো লাগল এবং পরে জনসাধারণও তাকে সাদরে গ্রহণ করেছিল।

 একই মোটরে প্রভাতকুমারের সঙ্গে ফিরে আসছি, হঠাৎ তিনি আমার কানে কানে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হেমেন্দ্রবাবু, আপনি এখন কোথায় যাবেন?’

 —‘বাড়ীতে।’

 —‘নিশ্চয়ই নয়। আজ আপনাকে আমার ওখানে গিয়েই রাত্রের ডান হাতের ব্যাপারটা সম্পন্ন করতে হবে। যদি আপত্তি করেন সে আপত্তি মানব না।’

 সহসা এই অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব শুনে এতই বিস্মিত হলুম যে, কোন আপত্তিই করতে পারলুম না। নীরবে তাঁর সঙ্গে গাড়ী থেকে নামলুম এবং সেইদিনই সর্বপ্রথমে লাভ করলুম আসল প্রভাতকুমারের সাহচর্য। খুলে পড়ল তাঁর গাম্ভীর্যের মুখোস, পানাহারের সঙ্গে প্রাণ খুলে গল্প করতে করতে তিনি সহচরের মত একেবারে ঘুচিয়ে দিলেন আমাদের বয়সের ব্যবধান। পরে বুঝেছিলুম তিনি মোটেই গম্ভীর নন, একান্ত মুখচোরা মানুষ, নূতন লোক দেখলে সাবধানে নির্বাক হয়ে থাকেন, নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন না। এই জন্যেই কেউ তাঁকে কোনদিনই কোন সভায় নিয়ে গিয়ে সভাপতি করতে বা বক্তৃতা দেওয়াতে পারে নি। এদিক দিয়ে তিনি ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মত। দ্বিজেন্দ্রলালকেও আমি কলকাতার কোন সভায় সভাপতি হ’তেও দেখি নি, বক্তৃতা দিতেও শুনি নি। একবার আমি তাঁকে একটি সভায় হাজির থাকতে দেখেছিলুম বটে, কিন্তু নির্বাক শ্রোতারূপে।

 তারপর কত সন্ধ্যা আমার প্রভাতকুমারের সঙ্গে কেটে গিয়েছে কত আনন্দে তার আর সংখ্যাই হয় না। এক একদিন তাঁর

৭৭