পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

ছিলেন তাঁদের শিষ্য বা প্রশিষ্য। কিন্তু তাঁদের গুরুর নাম কেউ জানে না। বোধ হয় তাঁরা ছিলেন জন্মনট, গোড়া থেকেই নাট্যকলায় ছিল তাঁদের অশিক্ষিতপটুত্ব। গিরিশ্চন্দ্রের নটজীবন শুরু হয় ১৮৬৭ কি ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে, সখের যাত্রার আসরে। অর্ধেন্দুশেখরেরও প্রথম আত্মপ্রকাশ প্রায় ঐ সময়েই। ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের জামাতার ভবনে “কিছু কিছু বুঝি” প্রহসনে তিনি অভিনয় করেন। গিরিশচন্দ্রের মুখে জানতে পারি, তিনি একলাই অভিনয় করেছিলেন তিনটি বিভিন্ন ভূমিকায়— পরে সাধারণ রঙ্গালয়ে যোগদান ক’রেও বহুবার তিনি এই ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। ধর্মদাস সুরের “আত্মজীবনী” প’ড়ে জানতে পারি, কেবল অভিনেতারূপে নয়, গোড়া থেকেই তিনি কৃতিত্ব প্রকাশ করেছেন অভিনয়-শিক্ষক রূপেও। এরকম ব্যাপার সচরাচর দেখা যায় না।

 বালক-বয়সে বুদ্ধি পাকবার আগে আমি তাঁকে যে সব ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখেছি, সেগুলির কথা নিয়ে আলোচনা ক’রে লাভ নেই। তবে সাবালক হ’য়ে তাঁর যে সব ভূমিকার দিকে আকৃষ্ট হয়েছি, সেগুলি হচ্ছে এই: বিদ্যাদিগগজ (দুর্গেশনন্দিনী), যোগেশ ও রমেশ (প্রফুল্ল), কর্তা (জেনানার যুদ্ধ), জলধর (নবীন তপস্বিনী), “সংসার” নাটকের একটি ভূমিকা— নাম মনে হচ্ছে না, রূপচাঁদ (বলিদান), দানসা (সিরাজদ্দৌলা), হলওয়েল; হে ও মেজর অ্যাডাম্‌স্‌ (মীরকাসিম), হারাধন (য্যায়সা-কা-ত্যায়সা), আবুহোসেন এবং বিয়ে-পাগলা বুড়ো (তুফানী)।

 গিরিশচন্দ্রের পুরাতন বন্ধু হ’লেও এক বিষয়ে তিনি তাঁর মত মানতেন না। গিরিশচন্দ্র অভিনয়ে সুর পছন্দ করতেন, অর্ধেন্দুশেখর পছন্দ করতেন না। তিনি যে সুরবর্জিত অভিনয় করতেন স্বাভাবিকতাই ছিল তার আদর্শ। আমি কোন পৌরাণিক নাটকে

৮১