পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

হয়ে উঠল যে, তারপর থেকে সেরা সেরা অভিনেতারা ঐ ভূমিকাটি নিয়ে কাড়াকাড়ি করতেন এবং রডার লোকপ্রিয়তা দেখে নাট্যকারও ভূমিকার আকার আরো বাড়িয়ে দিলেন। যখন “ম্যাকবেথ” খোলা হয়, তখন হোমরাচোমরা অভিনেতারা গ্রহণ করলেন ভারি ভারি ভূমিকা। কিন্তু অধিকাংশ হোমরাচোমরাদের মাথার মণি হয়েও অর্ধেন্দুশেখর নিজের জন্যে বেছে নিলেন ক্ষুদে ক্ষুদে পাঁচটি ভূমিকা— প্রথম ডাকিনী, বৃদ্ধ, প্রথম হত্যাকারী, ডাক্তার ও দ্বারপাল।

 পাশ্চাত্য নাট্যজগতে নবযুগ এনেছিল জার্মানীর মিনিন্‌জেন নাট্য-সম্প্রদায়— পরে যার আদর্শে গঠিত হয় রুশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত মস্কো আর্ট থিয়েটার। সেখানে বড় ও ছোট ভূমিকা ছিল তুল্যমূল্য। অর্ধেন্দুশেখরও নিশ্চয় ঐ মতই পোষণ করতেন। কিন্তু এইরকম নিঃস্বার্থ শিল্পী-মনের পরিচয় দিয়ে তাঁর পক্ষে আখেরে ফল বড় ভালো হয় নি। তিনি নটগুরু এবং সাধারণ বাংলা রঙ্গালয়ের অন্যতম স্রষ্টা হ’লেও সকলেই তাঁর মাথাতেই কাঁঠাল ভেঙে ভক্ষণ করেছে পরমানন্দে। সে সময়ে একজন নৃত্যশিক্ষকও দেড়শত টাকা মাহিনা পেতেন, অথচ নিজের মৃত্যুকাল পর্যন্ত অর্ধেন্দুশেখর কখনো আশী টাকার বেশী মাহিনা পান নি!

 অর্ধেন্দুশেখর দরিদ্র ছিলেন, কিন্তু তাঁর অসাধারণ শিল্পনিষ্ঠা কোনদিন তাঁকে টাকা-আনা-পয়সার দিকে আকৃষ্ট হ’তে দেয় নি। এমন কি এটা বলাও চলে যে, নিজেই তিনি নিজের মাথায় দারিদ্র্যের ভার তুলে নিয়েছিলেন এবং তারও কারণ গভীর নাট্যানুরাগ। পাথুরিয়াঘাটার মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর ছিলেন তাঁর পিস্‌তুতো ভাই এবং তাঁরা নিয়মিত মাসোহারা পেতেন ও সপরিবারে বাস করতেন রাজবাড়ীতেই। ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দে সেখানে

৮৩