পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

“বুঝলে কিনা” নামে একখানি প্রহসন অভিনীত হয়। বোধ করি তার উতোরেই লেখা হয় “কিছু কিছু বুঝি” প্রহসনখানি। আগেই বলেছি, ঐ পালাতেই অর্ধেন্দুশেখরের প্রথম আত্মপ্রকাশ। এই অপরাধে অর্ধেন্দুশেখরকে সপরিবারে রাজবাড়ী ত্যাগ করতে হয়। তারও ষোলা-সতেরো বৎসর পরে তাঁর সখ হয় নিজেই একটি নাট্য-সম্প্রদায় গঠন করবেন। সখ মিটল, তিনি হলেন “এমারেল্ড থিয়েটারে”র কর্তা। সখ তো মিটল, কিন্তু ব্যবসায়ী না হ’লে কেউ কি রঙ্গালয় চালাতে পারে? তিনিও পারলেন না, উল্টে দেনার দায়ে নিজের বসতবাড়ীখানা পর্যন্ত বেচে ফেলতে বাধ্য হলেন।

 সেকালে গিরিশচন্দ্র ও অর্ধেন্দুশেখর যথাক্রমে গম্ভীর এবং হাস্য রসে অদ্বিতীয় ছিলেন। তাঁদের সমসাময়িক যুগে বিলাতেও ঐ দুই বিভাগে যথাক্রমে প্রাধান্য বিস্তার করতেন স্যার হেনরি আর্ভিং ও জন লরেন্স ট্যুল। কিন্তু ট্যুলের চেয়ে অর্ধেন্দুশেখর এক বিষয়ে অধিকতর অগ্রসর ছিলেন। তিনি অনুরূপ দক্ষতা প্রকাশ করতে পারতেন গম্ভীর ও করুণ প্রভৃতি রসের ভূমিকাতেও।

 উচ্চ ও নিম্ন— দুই শ্রেণীর হাসি নিয়েই তাঁর কারবার ছিল। অর্ধেন্দুশেখরের “আবুহোসেন” যিনি দেখেন নি তাঁর নিতান্ত দুর্ভাগ্য। এই যুবকের ভূমিকায় বৃদ্ধ বয়সেও তিনি দেখিয়ে গিয়েছেন কৌতুকরসের পরাকাষ্ঠা। তেমন “আবুহোসেন” আজ পর্যন্ত আর কেউ দেখাতে পারলে না। বিদ্যাদিগগজের ভূমিকাতেও তিনি একটি পরম উপভোগ্য চরিত্র সৃষ্টি ক’রে গিয়েছেন। “তুফানী” পালায় বিয়ে-পাগলা বুড়ো সেজে তিনি নিজে বড় হাসতেন না, কিন্তু দর্শকরা তাঁর ধরনধারন দেখে ও কথা শুনে হেসে একেবারে গড়িয়ে পড়ত।

 বৃদ্ধের ভূমিকায় তাঁর চেয়ে ভালো অভিনেতা আমি আর দেখি

৮৪