পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

পূর্বে জার্মানীর যে মিনিন্‌জেন নাট্য-সম্প্রদায়ের কথা বলেছি, সেখানে মহলার ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত পরিপাটি। সেখানে নূতন নাটকের মহলা দেওয়া হ’ত সুদীর্ঘকাল ধ’রে অশ্রান্ত ভাবে। যতদিন না প্রত্যেক ছোট ভূমিকাটি পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিখুঁত ভাবে প্রস্তুত হয়ে ওঠে, ততদিন কোন নাটকই মঞ্চস্থ করা হ’ত না। মস্কো আর্ট থিয়েটারেও ছিল ঐ ব্যবস্থা। সেখানে একাধিক বৎসরব্যাপী মহলার কথাও শোনা যায়।

 এখন গিরিশচন্দ্রের নিজের মুখে অর্ধেন্দুশেখরের পদ্ধতির কথা শুনুন: ‘অর্ধেন্দু কোন এক ক্ষুদ্র অংশ ভাল হয় নাই, তাহা কিরূপে সম্পূর্ণ হইবে, তার জন্য বিব্রত। * * * ক্ষুদ্র অভিনেতা কোনও রূপে শিখিতেছে না, অর্ধেন্দু তাকে কোনরূপে শিখাইবেনই। * * * তাঁহার কার্যে বাধা দিলে অতিশয় বিরক্ত হইতেন, নিখুঁত না হইলে সে অভিনেতার আর নিস্তার নাই।’

 বাংলা রঙ্গালয়ে অর্ধেন্দুশেখরের কাছে শিক্ষালাভ করেন নি, এমন নট-নটী খুব কম। অমৃতলাল বসু ও তারাসুন্দরীও তাঁর শিষ্যত্ব স্বীকার করেছেন। তাঁর হাতে-গড়া অন্যান্য শিষ্যদের মধ্যে মহেন্দ্রলাল বসু, তারকদাস পালিত, অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মন্মথনাথ পাল (হাঁদুবাবু), নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (থাকোবাবু) ও ক্ষেত্রমোহন মিত্রের নাম উল্লেখযোগ্য।

 নিজের জাতীয়তা সম্বন্ধে অর্ধেন্দুশেখর ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। কলকাতার সাহেবপাড়ার রঙ্গালয়ে ডেভ কার্সন নামে এক ইংরেজ নট, “বেঙ্গলী বাবু”কে নিয়ে ব্যঙ্গ করতেন এবং তার নাম দিয়েছিলেন “ডেভ কার্সন সাহেব কা পাকা তামাসা।” অর্ধেন্দুশেখরের মর্মে বিদ্ধ হ’ল এই ব্যঙ্গবাণ। তিনিও তৎক্ষণাৎ রচনা ক’রে ফেললেন (ইংরেজী ও হিন্দীতে) একটি ব্যঙ্গ-কবিতা বা গীত এবং

৮৬