পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

নি। আবার সাহেব সেজে তিনি এমন নিখুঁত অভিনয় করতে পারতেন যে, তাঁকে বাঙালী ব’লে চেনবার উপায় থাকত না। এইজন্যে নাট্যজগতে তাঁর ডাকনাম ছিল “সাহেব”। আমাদের নাট্যজগতে আর যে সব নট য়ুরোপীয়দের ভূমিকা গ্রহণ করেন, সাধারণতঃ অতি-অভিনয়ের জন্যে ভূমিকাগুলি পরিণত হয় ‘ক্যারিকেচারে’। এ দোষ তাঁর অভিনয়ে কখনো দেখা যেত না। আর এক শ্রেণীর ভূমিকাতেও তিনি প্রথম শ্রেণীর শক্তি জাহির করে গিয়েছেন— যেমন রমেশ, রূপচাঁদ ও দানসা ফকির প্রভৃতি।

 “প্রফুল্ল” নাটকের যোগেশ একটি বিখ্যাত ভূমিকা। “যোগেশ” রূপে গিরিশচন্দ্র শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের চরম সীমায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই ভূমিকায় একদিন অর্ধেন্দুশেখরের নাম বিজ্ঞাপিত হওয়াতে আমি দেখতে গেলুম সাগ্রহে। হতাশ হ’তে হল না। তিনি দেখালেন সম্পূর্ণ নূতন ধারণা। কেবল দুই জায়গায় তিনি গিরিশচন্দ্রের কাছে গিয়ে পৌঁছতে পারেন নি এবং আর কেউ পারবেন বলেও বিশ্বাস হয় না। শুঁড়ীখানার দৃশ্যে এবং শেষ-দৃশ্যে গিরিশচন্দ্র ছিলেন একেবারেই অতুলনীয়।

 তিনি আর এক আশ্চর্য শক্তির অধিকারী ছিলেন। বিভিন্ন ভূমিকায় বিভিন্ন কণ্ঠস্বর ব্যবহার করতে পারতেন। কোন নাটকে একাই যখন তিন-চারটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হ’তেন, তখন তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যেও লক্ষ্য করা যেত তিন-চার রকম পরিবর্তন। এ শক্তি আর কোন নটের আছে বলে জানি না। কত কঠিন কণ্ঠসাধনার দ্বারা এই দুর্লভ শক্তি অর্জন করা যায়, তা ধারণাতেও আসে না।

 কিন্তু তিনি অধিকতর খ্যাতি অর্জন করেছেন নাট্যাচার্য রূপে। তিনি যে ভাবে নাট্যশিক্ষা দিতেন, গিরিশচন্দ্র তা পারতেন না।

৮৫