পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 তারপর জগদিন্দ্রনাথকে দেখি পূর্ণিমা সম্মিলনের এক অধিবেশনে। সেদিন ক্রিকেট-ব্যাট ফেলে তিনি ধরেছিলেন পাখোয়াজ। তাঁর হাতে পাখোয়াজ বড় মিষ্ট বাজত। স্মরণ হচ্ছে যেন সেই আসরেই তাঁর পুত্র ও বর্তমান মহারাজা যোগীন্দ্রনাথ রায়ের গানও শুনেছিলুম। সেদিন আর এক ব্যাপারে মনে জেগেছিল বিস্ময়। এদেশে নাচ আগে ছিল নট-নটী, বাইজী ও খেমটাওয়ালীদের নিজস্ব। কিন্তু এখন আমাদের ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত পরিবারভুক্ত বড় বউ, ছোট বউ থেকে বড় বাবু, ছোট বাবু পর্যন্ত যে কেহ আসরে গিয়ে ধেই ধেই করলেও কেউ অবাক হবার নাম করে না। কিন্তু আমি যে সময়কার কথা বলছি তখন সাহিত্যিক ও বিদগ্ধদের সভার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কোন শিক্ষিত পুরুষ যে পায়ে নূপুর প’রে নৃত্য করতে পারেন, সেটা ছিল একেবারেই কল্পনাতীত, কারণ বাংলা নাচ তখনও জাতে ওঠে নি। অথচ, সেদিনকার সভায় যখন জগদিন্দ্রনাথের শিল্পী-সহচর স্বর্গীয় যতীন্দ্রনাথ বসুকে নৃত্য করতে দেখলুম, তখন চমকিত হয়েছিলুম বৈকি!

 তারপর জগদিন্দ্রনাথ ব্যাট ও পাখোয়াজ শিকায় তুলে রেখে কলম ধ’রে “মানসী”র দলের নায়ক হয়ে বসলেন। অবশ্য তাঁর সাহিত্যিক মনোবৃত্তির অভাব হয় নি কোনদিন। সাহিত্যসেবকদের বরাবরই তিনি ভালোবেসে এসেছেন, সাহিত্যাচার্য রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ বহু ধুরন্ধর সাহিত্যিক ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং নিজেও ছিলেন তিনি যথার্থ কবি ও প্রবন্ধ রচনায় বিশারদ। কিন্তু এবারে তিনি একান্তভাবে সাহিত্যকে নিয়েই মেতে উঠলেন। অধিকার করলেন “মানসী”র সম্পাদকীয় আসন। মাসে মাসে উপহার দিতে লাগলেন গদ্যে-পদ্যে বিবিধ রচনা।

 এই সময়ে “মানসী”র পক্ষ থেকে তিনি একটি প্রীতি-ভোজনের

৮৯