পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 সাহিত্যিক বন্ধু দুইজন মৌনবাক। আমি অপ্রতিভ। জগদিন্দ্রনাথ কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ না ক’রে গম্ভীর, উদাত্ত কণ্ঠে কবিতা পাঠ করতে লাগলেন।

 রাজা-মহারাজা ও ধনী ব্যক্তিদের যাঁরা চাটুবাদের দ্বারা খুসি করতে চান, তাঁরা নির্বোধ ছাড়া আর কিছু নন। জ্ঞানোদয় থেকে যাঁরা চাটুবাদ শুনতে অভ্যস্ত হয়েছেন, ও-ব্যাপারটাকে তাঁরা উপসর্গ ব’লেই মনে করেন। স্পষ্টভাষীদের তাঁরা শ্রদ্ধা করেন— মনে মনে খুসি হ’তে না পারলেও।

 এ জীবনে বহু উপাধিধারী ও প্রায়-স্বাধীন রাজা এবং মহারাজার সংস্পর্শে এসেছি, কিন্তু জগদিন্দ্রনাথের মত ধীমান, বিদগ্ধ ও সুরসিক মহারাজা আর কখনো দেখি নি। তাঁর সম্বন্ধে আরো অনেক গল্প বলতে পারতুম, কিন্তু আপাতত স্থানাভাব।

 জগদিন্দ্রনাথের মৃত্যুও অত্যন্ত সকরুণ। কলকাতার গড়ের মাঠের মধ্যবর্তী রাজপথে পদব্রজে ভ্রমণ করছিলেন, হঠাৎ একখানা মোটর গাড়ীর ধাক্কায় তিনি সাংঘাতিকরূপে আহত হন। কিন্তু অন্তিমকালেও তিনি নিজের মহত্বের অপূর্ব পরিচয় দিয়ে যান। ব’লে গিয়েছিলেন, ‘যে গাড়ী আমাকে ধাক্কা মেরেছে, তার চালককে যেন কোন দণ্ড দেওয়া না হয়।’

৯৪