পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

সামনে। তার এক কি দেড় বৎসর আগে সেইখানেই ছিল মাসিক পত্রিকা “যমুনা”র কার্যালয়। সেখানে খালি আপিস নয়, আমরা একটি সাহিত্য-বৈঠকও বসিয়েছিলুম, প্রতি সন্ধ্যায় তখনকার যশস্বী সাহিত্যিকরা সেখানে ব’সে ওঠা-বসা, আলাপ-আলোচনা করতেন। সে সব বিখ্যাত নামের তালিকা এখানে দিলুম না, কারণ তালিকা হবে সুদীর্ঘ।

 জগদিন্দ্রনাথও বৈকালের দিকে আসতেন মাঝে মাঝে এবং প্রায়ই তাঁর সঙ্গে থাকত সদ্য-রচিত কবিতা। সেইসব কবিতা তিনি পাঠ ক’রে শোনাতেন তাঁর সুন্দর কণ্ঠে।

 একদিন তিনি জানলার আলোকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে একটি নূতন কবিতা পাঠ করতে উদ্যত হলেন এবং সেখানে উপস্থিত আমি ছাড়া আরো দুইজন সাহিত্যিক (তাঁদের নাম আর করলুম না)। সেই সাহিত্যিক বন্ধুরা জানালেন— মহারাজ, আপনি কেন লেখা শোনাবার জন্যে কষ্ট ক’রে এত দূরে আসেন? খবর দিলেই তো আমরা আপনার ওখানে গিয়ে কবিতা শুনে আসতে পারি!

 জগদিন্দ্রনাথ হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন, ‘আপনারা আমার ওখানে গিয়ে কবিতা শুনে আসতে পারবেন, কিন্তু হেমেন্দ্রবাবু পারবেন না— উনি ‘মর্মবাণী’র কাজ-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকেন, আর আমি বিশেষ করে ওঁকেই আমার কবিতা শোনাতে চাই। কেন জানেন? হেমেন্দ্রবাবু স্পষ্ট ভাষায় মত প্রকাশ করেন। সেদিন আমাকে সোজাসুজি জানিয়ে দিলেন, আমার গদ্য রচনা নাকি আধুনিক যুগের উপযোগী নয়, কিন্তু আমার কবিতাগুলি হয় খুব ভালো। অথচ অন্য যে সব সাহিত্যিকের কাছে গদ্য-পদ্য যে কোন রচনা প’ড়ে শুনিয়েছি, তাঁরা উচ্ছসিত কণ্ঠে কেবল প্রশংসা করেছেন— কেবল প্রশংসা!’

৯৩