পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

করেন নি) পৃষ্ঠপোষকতায় যখন মাসিকপত্র “নারায়ণ” প্রকাশিত হয়, বিপিনচন্দ্রই তার প্রধান ভার গ্রহণ করেছিলেন। রবীন্দ্রপ্রভাবের মধ্যে থেকে প্রকাশিত হচ্ছে তখন “সবুজপত্র”, তার প্রতিযোগী হয়ে বেরুতে লাগল “নারায়ণ”। তার একাধিক লেখক বাষ্পাচ্ছন্ন ঝাপসা চোখে দিকবিদিক হাতড়ে ব্যাকুল হয়ে খুঁজে বেড়াতে লাগলেন কোথায় আছে বাংলার প্রাণ? কোথায় যে আছে তা স্পষ্ট ক’রে বোঝা গেল না বটে, কিন্তু থেকে থেকে সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল রবীন্দ্রনাথকে ও রবীন্দ্রপন্থিগণকে আক্রমণের চেষ্টা।

 প্রথম যখন বিপিনচন্দ্রের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পাই, আমি তখন “সঙ্কল্প” নামে স্বল্পজীবী বৃহৎ মাসিকপত্রে সহকারী সম্পাদকের কাজ করি। সুকিয়া (এখন কৈলাস বোস) স্ট্রীটে লক্ষ্মী প্রিণ্টিং ওয়ার্কস নামে একটি বড় ছাপাখানা ছিল, “সঙ্কল্প” মুদ্রিত হ’ত সেইখানেই। বিপিনচন্দ্রের সম্পাদনায় তখন একখানি ইংরেজী মাসিকপত্র (বোধহয় নাম তার “হিন্দু রিভিউ” প্রকাশিত ও মুদ্রিত হ’ত ঐ মুদ্রাযন্ত্রেই। আমাকেও প্রায় ছাপাখানায় যেতে হ’ত, বিপিনচন্দ্রেরও না গিয়ে উপায় ছিল না। সুতরাং তাঁর সঙ্গে আলাপ জমাতে বিলম্ব হ’ল না।

 শ্যামবর্ণ, মাঝারি আকারের বেশ ফিটফাট মানুষটি—সিল্কের চাদর, সিল্কের পাঞ্জাবী, সিল্কের কাপড়, বয়স হ’লেও সৌখিনতার অভাব নেই। দাড়ী-গোঁফ কামানো, চোখে চশমা। মুখশ্রী সুন্দর না হলেও প্রতিভাব্যঞ্জক, সহজেই দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। একদিন দেখলুম তাঁর সামনের টেবিলের উপরে রয়েছে দুইখানি হাফটোন ছবির ব্লক। ভালো ক’রে তাকিয়ে দেখলুম, অভিনেত্রী তারাসুন্দরীর অভিনয়ের ছবি। জিজ্ঞাসা করলুম, ‘ও ব্লক আপনার টেবিলে কেন?’

৯৮