পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 তিনি বললেন, ‘ইংরেজীতে তারাসুন্দরীর অভিনয় নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছি, তারই ছবি।’

 বিপিনচন্দ্র ছিলেন ব্রাহ্ম এবং তখনকার দিনে অধিকাংশ ব্রাহ্মই ছিলেন বাংলা রঙ্গালয়ের বিরোধী। কেবল ব্রাহ্মই বা বলি কেন, কোন হিন্দু সম্পাদকও তখন পর্যন্ত সাহিত্য সম্পর্কীয় মাসিক পত্রিকায় নট-নটীর ছবি প্রকাশ করেন নি। সুতরাং বেশ বিস্মিত স্বরেই বললুম, ‘আপনার কাগজে ঐ ছবি ছাপা হবে, নটীর অভিনয় সমালোচনা বেরুবে!’

 তিনি মৃদু মৃদু হাসতে হাসতে বললেন, ‘তাতে দোষটা কিসের? নাট্যসাধনা একটা বড় ব্যাপার, তারাসুন্দরী একজন শ্রেষ্ঠ শিল্পী, আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি।’

 এমনি ছিল তাঁর সংস্কারমুক্ত মন। অথচ এমন নির্মুক্ত মনও সময়ে সময়ে বদ্ধ হয়ে পড়ত, তারও পরিচয় পরে দেব।

 একদিন আমার বন্ধুদের মধ্যে তর্ক বাধল, “প্লে-রাইট” বড় না “ড্রামাটিষ্ট” বড়? এসম্বন্ধে এখনো এদেশের অনেক শিক্ষিত ব্যক্তির সন্দেহের অভাব নেই। এই সেদিনই শ্রীশিশিরকুমার ভাদুড়ী গিরিশচন্দ্রকে “প্লে-রাইট” বলেছিলেন ব’লে গিরিশচন্দ্রের অপমান করা হয়েছে ভেবে জনৈক ভদ্রলোক প্রভূত উষ্মা প্রকাশ না ক’রে ক্ষান্ত হ’তে পারেন নি এবং তিনি এম-এ ডিগ্রীধারী।

 একদিন বিপিনচন্দ্রের কাছে ঐ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলুম। তিনি বললেন, ‘ “প্লে-রাইট” আর “ড্রামাটিষ্ট”, ওঁরা কেউ কারুর চেয়ে ছোট বা বড় নন। তফাৎ খালি এই, “প্লে-রাইট” একটি বিশেষরঙ্গালয়ের সুবিধা-অসুবিধা দেখে, নট-নটীদের প্রকৃতি বুঝে নাটক রচনা করেন, আর “ড্রামাটিষ্ট” হচ্ছেন নিরঙ্কুশ, তিনি কোন— দিকেই ভ্রুক্ষেপ না ক’রে স্বাধীন ভাবেই লেখনীচালনা করতে

৯৯