পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\sსტ6 যাত্রাবদল ছিলেন ননীর বাবা, এপারে লোকে লোকারণ্য হয়েছিল। হোসঙ্গাবাদে তার কিসের বঁাধন আছে ? কিছুই না-সে দু’দিনের বঁাধন। এখানকার সঙ্গে সম্বন্ধ অনেক গভীর ; এতদিন আসেনি, তাই ভুলে ছিল। আজ সেই তিন বছরেব অবোধ বোবা কালা ছোট ভাইয়ের করুণ মুখখানি তার মনে স্পষ্ট হয়ে ফুটুলো— সে কি ভাবে তার দিকে চাইতো, তার সে বুদ্ধিহীন দৃষ্টি, ন্যাকের সেই তিলটিআশ্চৰ্য্য। মানুষের এতও মনে থাকে । সমস্ত জীবনটা ননী যেন এক মুহুর্তে একটা ম্যাপের মত চোখের সামনে পড়ে আছে দেখতে পেলে । প্ৰথম জীবনের দারিদ্র্য, প্ৰথম বিদেশীযাত্রা, ব্যবসাতে উন্নতি, বিবাহ--তার মনে হোল, যাকে সে এতদিন সাফল্য ভেবে আত্মপ্ৰসাদ লাভ করে এসেছে, জীবনে আসলে তার মূল্য কি ! তার যেন আজ একটা নতুন চোখ খুলেচে, জীবনের পাতাগুলো নতুনভাবে পড়তে শিখেচে, জীবনে যা নিয়ে এতদিন সে ভুলে আছে আজ মনে হচ্চে তা ভেতরের সম্পদ নয়, বাইরের পালিশ তাও নয় । জীবনটা যেন এতদিন জ্যামিতির সরল রেখার মত প্ৰস্থবিহীন, গভীরতাবিহীন একটা পথে চলে এসেচে-গভীরতর অনুভূতির অভাবে সে বুঝতে পারেনি যে জীবনের আর একটা বিস্তার আছে আর একদিকে, সেটা তার গভীরতা। নিজের মনের মধ্যে ডুব দেওয়ার অবকাশ কখনো তো হয়নি! যে-পথ দিয়ে নেমে গেলে সরোবরের গভীর অন্ধকারতলে-লুকোনো মায়াপুরীর সন্ধান মেলে-তার সোপানশ্রেণী অস্পষ্ট নজরে পড়েচে, কিন্তু সময় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েচে, এমন অসময়ে নজরে পড়লেই কি, বা না পড়লেই কি ? তাকে ফিরে যেতে হবে । কাঠের হিসাব ঠিক করতে হবে, ফরেষ্ট অফিসারদের সাথে দেখা করে নতুন জঙ্গল ইজারা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ব্যবসাকে আরও বাড়াবার চেষ্টা পেতে হবে, ব্যাঙ্কে জমানে টাকার অঙ্ককে বাড়াতে হবে।