পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 বিপ্রদাস উদ্বিগ্নমুখে জিজ্ঞাসা করলে, “কালুদা, খবর কী বলো।”

 “তোমার একলার সইয়ে টাকা ধার দিতে কেউ রাজি হয় না, সুবোধের সই চায়। মাড়োয়ারি ধনীদের কেউ কেউ দিতে পারে, কিন্তু সেটা নিতান্ত বাজিখেলার মতো করে—অত্যন্ত বেশি সুদে চায়, সে আমাদের পোষাবে না।”

 “কালুদা, সুবোধকে তার করতে হবে আসবার জন্যে। আর দেরি করলে তো চলবে না।”

 “আমারও ভালো ঠেকছে না। সেবারে তোমার সেই আংটি-বেচা টাকা নিয়ে যখন মূল দেনার এক অংশ শোধ করতে গেলুম, মধুসূদন নিতে রাজিই হল না; তখনই বুঝলুম সুবিধে নয়। নিজের মর্জিমতো একদিন হঠাৎ কখন ফাঁস এঁটে ধরবে।”

 বিপ্রদাস চুপ করে ভাবতে লাগল।

 কালু বললে, “দাদা, ছোটোখুকী যে হঠাৎ আজ সকালে চলে এল, রাগারাগি করে আসে নি তো? মধুসূদনকে চটাবার মতো অবস্থা আমাদের নয়, এটা মনে রাখতে হবে।”

 “কুমু বলছে ওর স্বামীর সম্মতি পেয়েছে।”

 “সম্মতিটার চেহারাটা কী রকম না জানলে মন নিশ্চিন্ত হচ্ছে না। কত সাবধানে ওর সঙ্গে ব্যবহার করি সে আর তোমাকে কী বলব দাদা। রাগে সর্ব অঙ্গ যখন জ্বলছে তখনও ঠাণ্ডা হয়ে সব সয়েছি, গৌরীশংকরের পাহাড়টার মতো, দুপুর-রোদ্দরেও তার বরফ গলে না। একে মহাজন তাতে ভগ্নীপতি, একে সামলে চলা কি সোজা কথা।”

 বিপ্রদাস কোনো জবাব না করে চুপ করে ভাবতে লাগল।

 কুমু এল বার্লি নিয়ে। বিপ্রদাসের মুখের কাছে পেয়ালা ধরে বললে, “দাদা, খেয়ে নাও।”

২৩৭