পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

কেননা সে জানে ওকে অল্প একটু প্রশ্রয় দিলেই ও আর মর্যাদা রাখতে পারে না। ব্রাউন কাগজে জিনিসটা মোড়া ছিল। আস্তে আস্তে কাগজের মোড়কটা খুলে ফেলে বললে, “কী হবে এটা?”

 মধুসূদন বললে, “জান না, এতে ফটোগ্রাফ রাখতে হয়।”

 শ্যামার বুকের ভিতরটাতে কে যেন চাবুক চালিয়ে দিলে, বললে, “কার ফটোগ্রাফ রাখবে?”

 “তোমার নিজের। সেদিন যে ছবিটা তোলানো হয়েছে।”

 “আমার এত সোহাগে কাজ নেই।” বলে সেই ফ্রেমটা ছুঁড়ে মেজের উপর ফেলে দিলে।

 মধুসূদন আশ্চর্য হয়ে বললে, “এর মানে কী হল?”

 “এর মানে কিছুই নেই।” বলে মুখে হাত দিয়ে কেঁদে উঠল, তার পরে বিছানা থেকে মেজের উপর পড়ে মাথা ঠুকতে লাগল। মধুসূদন ভাবল, শ্যামার কম দামের জিনিস পছন্দ হয় নি, ওর বোধ করি ইচ্ছে ছিল একটা দামি গয়না পায়। সমস্ত দিন আপিসের কাজ সেরে এসে এই উপদ্রবটা একটুও ভালো লাগল না। এ-যে প্রায় হিস্‌টিরিয়া। হিস্‌টিরিয়ার ’পরে ওর বিষম অবজ্ঞা। খুব একটা ধমক দিয়ে বললে, “ওঠো বলছি, এখনই ওঠো!”

 শ্যামা উঠে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মধুসূদন বললে, “এ কিছুতেই চলবে না।”

 মধুসূদন শ্যামাকে বিশেষ ভাবেই জানে। নিশ্চয় ঠাওরেছিল একটু পরেই ফিরে এসে পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়ে মাপ চাইবে—সেই সময়ে খুব শক্ত করে দুটো কথা শুনিয়ে দিতে হবে।

 দশটা বাজল, শ্যামা এল না। আর-একবার শ্যামার ঘরের দরজার বাইরে থেকে আওয়াজ এল, “মহারাজ বোলায়া।”

২৭৯