পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

ধারের বাতাবিলেবুগাছের শাখার উপর দিয়ে এসে ঘন কালাে জলের উপরে নিকষে সােনার রেখার মতাে ঝিকিমিকি করতে থাকে; ও চেয়ে চেয়ে দেখে, সেই আলােয় ছায়ায় ওর সমস্ত শরীরের উপর দিয়ে অনির্বচনীয় পুলকের কাঁপন বয়ে যায়। মধ্যাহ্নে বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় একলা গিয়ে বসে থাকে, পাশের জামগাছ থেকে ঘুঘুর ডাক কানে আসে। ওর যৌবন-মন্দিরে আজ যে-দেবতার বরণ হচ্ছে ভাবঘন রসের রূপটি তার, কৃষ্ণরাধিকার যুগলরূপের মাধুর্য তার সঙ্গে মিশেছে। বাড়ির ছাদের উপরে এসরাজটি নিয়ে ধীরে ধীরে বাজায়, ওর দাদার সেই ভূপালী সুরের গানটি:

আজু মাের ঘরে আইল পিয়রওয়া
রােমে রােমে হরখীলা।

 রাত্রে বিছানায় বসে প্রণাম করে, সকালে উঠে বিছানায় বসে আবার প্রণাম করে। কাকে করে সেটা স্পষ্ট নয়,—একটি নিরবলম্ব ভক্তির স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস।

 কিন্তু মনগড়া প্রতিমার মন্দিরদ্বার চিরদিন তাে রুদ্ধ থাকতে পারে না। কানাকানির নিশ্বাসের তাপে ও বেগে সে-মূর্তির সুষমা যখন ঘা খেতে আরম্ভ করে তখন দেবতার রূপ টিঁকবে কী করে। তখন ভক্তের বড়ো দুঃখের দিন।

 একদিন তেলেনিপাড়ার বুড়ী তিনকড়ি এসে কুমুদিনীর মুখের সামনেই বলে বসল, “হ্যাঁ গা, আমাদের কুমুর কপালে কেমন রাজা জুটল? ওই যে বেদেনীদের গান আছে,

এক-যে ছিল কুকুর-চাটা শেয়ালকাঁটার বন,
কেটে করলে সিংহাসন।

৪১