পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 এ-ও সেই শেয়ালকাঁটা-বনের রাজা। ওই তাে রজবপুরের আন্দো মুহুরির ছেলে মােধো। দেশে যে-বার আকাল, মগের মুলুক থেকে চাল, আনিয়ে বেচে ওর টাকা। তবু বুড়ী মাকে শেষদিন পর্যন্ত রাঁধিয়ে রাঁধিয়ে হাড় কালি করিয়েছে।”

 মেয়েরা উৎসুক হয়ে তিনকড়িকে ধরে বসে; বলে, “বরকে জানতে না কি?”

 “জানতুম না? ওর মা যে আমাদের পাড়ার মেয়ে, পুরুত চক্রবর্তীদের ঘরের। (গলা নিচু করে) সত্যি কথা বলি বাছা, ভালাে বামনের ঘরে ওদের বিয়ে চলে না। তা হােক গে, লক্ষ্মী তাে জাতবিচার করেন না।”

 পূর্বেই বলেছি কুমুদিনীর মন একালের ছাঁচে নয়। জাতকুলের পবিত্রতা তার কাছে খুব একটা বাস্তব জিনিস। মনটা তাই যতই সংকুচিত হয়ে ওঠে ততই যারা নিন্দে করে তাদের উপর রাগ করে; ঘর থেকে হঠাৎ কেঁদে উঠে ছুটে বাইরে চলে যায়। সবাই গা-টেপাটেপি করে বলে, “ইস, এখনই এত দরদ? এ যে দেখি দক্ষযজ্ঞের সতীকেও ছাড়িয়ে গেল।”

 বিপ্রদাসের মনের গতি হাল-আমলের, তবু জাত-কুলের হীনতায় তাকে কাবু করে। তাই, গুজবটা চাপা দেবার অনেক চেষ্টা করলে। কিন্তু ছেঁড়া বালিশে চাপ দিলে তার তুলাে যেমন আরও বেশি বেরিয়ে পড়ে, তেমনি হল।

 এদিকে বুড়ো প্রজা দামােদর বিশ্বাসের কাছে খবর পাওয়া গেল যে, বহুপূর্বে ঘােষালেরা নুরনগরের পাশের গ্রাম শেয়াকুলির মালেক ছিল। এখন সেটা চাটুজ্যেদের দখলে। ঠাকুর-বিসর্জনের মামলায় কী করে সবসুদ্ধ ঘােষালদেরও বিসর্জন ঘটেছিল, কী কৌশলে কর্তাবাবুরা, শুধু দেশছাড়া নয়, তাদের সমাজছাড়া করেছিলেন, তার বিবরণ বলতে বলতে

৪২