পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৮২ এরই সূত্র ধরে কবি লিখছেন– “জানলা দিয়ে বৃষ্টিতে গা ভেজে যদি ভিজুক তো, ভুলেই গেলাম লিখতে নাটক আছি আমি নিযুক্ত।” কবিতাটি লেখার আগে, শিলঙে পৌছবার বারো- তেরো দিন পরে ১১ মে (১৯২৩) তারিখে শিলঙ থেকে রবীন্দ্রনাথ অমিয় চক্রবতীকে যে চিঠি লেখেন, তার শেষের দিকে তিনি বলছেন– “তুমি এবার শিলঙে এলে খুসি হতুম। আমার শরীর অনেকটা সুস্থ হয়েচে । বিশ্বভারতী ত্রৈমাসিকের জন্যে প্যারাগ্রাফ আকারে একটা লেখা শেষ করেচি। একটা নাটক গোচের একটা কিছু লেখবার ইচ্ছে আছে।” অনুমান করা চলে, শিলঙে পৌঁছবার অব্যবহিত পরেই, মে মাসের শুরুতে ‘রক্তকরবী'র প্রথম খসড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং মে মাসের শেষের দিকে খসড়াটি লিখতে শুরু করেন। নির্দিষ্ট কোন তারিখে তিনি এই কাজ শুরু করেন, তা জানার প্রধান বাধা এই যে কয়েকটি খোলা কাগজে লিখিত প্রথম খসড়াটির কোথাও কোনো তারিখ উল্লিখিত নেই, অথবা অন্য কোথাও কবি তা ব্যক্ত করেন নি। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শ্রীমতী রাণু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ তখন এ বিষয়ে স্পষ্টত কাউকেই কোনো আভাস দেন নি, কিন্তু বোঝা যেত যে তিনি গভীর কোনো চিন্তায় মগ্ন ছিলেন । কবি অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা ‘নাটক গোচের অথবা ‘শিলঙের চিঠিতে উল্লিখিত নাটকের সূত্র ধরে বলা যায়, কবি একান্ত নিভৃতে তখন 'রক্তকরবী'র প্রথম খসড়াটি রচনায় ব্যস্ত ও মগ্ন । তিনি এই খসড়াটিকে “নাটক গোচের বলেছেন, তার কারণ সম্ভবত এই যে তখনও পর্যন্ত নাটকের রূপটি কবির মনে নীহারিকার মতো বিরাজ করছিল, স্পষ্ট কোনো আকার ধারণ করে নি। প্রথম খসড়াটির গঠনের দিকে লক্ষ রাখলে এই ধারণাই গড়ে ওঠে । এই সূত্রেই অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা চিঠিতে ‘রক্তকরবী সম্পর্কে কবির আরও কয়েকটি মন্তব্য উদ্ধৃত করা গেল : ১ . শীঘ্রই আসবে আশা করে তোমার দু:খানা চিঠির জবাব দিই নি। তার উপর একখানা নাটক লেখায় ও আর একখানা নাটক অভিনয় ব্যাপারে ঘোরতর ব্যস্ত ছিলুম। ... আমার নূতন নাটকটি পড়া হয়ে গেল। ৪ জুলাই ১৯২৩ ২ নাটকটার যে সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখেচ সেটি বেশ হয়েচে । কেবল ওর মধ্যে আপত্তিকর কথা আছে এই যে তুমি বলেচ এ নাটক বিশেষভাবে পশ্চিমের পক্ষে উপযোগী ! ... স্বরচিত যন্ত্রের হাতে মানুষ পীড়িত হচ্চে এই তথ্যটি নুনাধিক পরিমাণে সব দেশেরই– কিন্তু তথ্য পদার্থটিই ত সাহিত্য নয়। মানুষের বেদনা- তার কারণ যাই থাক— যখন সাহিত্যের আকার ধারণ করে তখন তার আর দেশভেদ থাকে না । আগস্ট ? ১৯২৩ । ৩ আমি বোধ হয় শনিবারে আশ্রমে পৌঁছব | নন্দিনী নাটকটার উপর ক্ষণে ক্ষণে প্রায়ই তুলি বুলচ্চি— তাতে তার রং ফুটচে বলেই বোধ হচ্চে। কাল সন্ধ্যাবেলায় আত্মীয়সভায় ওটা আর একবার পড়বার কথা আছে । আগাগোড়া