পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্বলি-দীপিত কড়ি ও কোমল রবীন্দ্রনাথের “মানসী” কাব্যটিকে আমরা যে অবস্থায় পাই তাহাতে স্বাক্টর অনিয়মের নিবিড় উত্তাপ ও উচ্ছ্বাস নিবৃত্ত হ’য়ে গেছে। শক্তির প্রবল তাড়নায় নিরালম্ব শূন্যের উপর ভর করে যে ঘুর্ণাপাক হয়েছিল, লক্ষ্যহীন অনুসন্ধানের মধ্যে আত্মপ্রকাশের গভীর মৰ্ম্মবেদনায় যে ঘন বাষ্প ও ধুমরাশি আপনাকে আচ্ছন্ন ক'রে রেখেছিল, সৌন্দৰ্য্যময় আনন্দলোকের স্বষ্টিনিয়মের মধ্যে “মানসী”তে তার পরিস্ফুৰ্ত্ত উন্মেষের সন্ধান পাওয়া যায়। কৈশোরক, ভানুসিংহের পদাবলী, সন্ধ্য সঙ্গীত, প্রভাত সঙ্গীত, ছবি ও গান, প্রকৃতির পরিশোধ, কড়ি ও কোমল, মায়ার খেলা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে নানা রূপের বিচিত্র সমাবেশে কাব্যলক্ষ্মীর যে সুন্দর ছবিটি উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল "মানসী’তে তাঁহাই পরিকল্পিতসত্বযোগ হয়ে পূর্ণ প্রাণের দীপ্তি নিয়ে আমাদের সম্মুখে দাড়িয়েছে। সেই জন্য আমরা এর পূর্ববর্তী কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে দেখতে পাই যে কবি বুঝতে পারছেন, যে, তার এমন একটা কিছু বলবার আছে, যা বলতে পারলে তার জীবনের কৃত্য শেষ হ’য়ে গেল, এবং যা বলবার জন্যে তার প্রাণ ছটফট করছে, অথচ সে কথা তিনি মুখ ফুটে বলতে পারছেন না। পাই পাই ক’রে তা পাচ্ছেন না, ছুই ছুই করে তাকে ধরতে পারছেন না এবং সেই অভাবে তার অন্তরের গৃঢ়তম প্রদেশ পৰ্যন্ত ব্যথার আঘাতে কম্পিত হ’য়ে উঠছে।