বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শক্তির অধিকার ততদূর পর্যন্ত সে ব্যাপ্ত হয় এবং কোন্‌খানে তাহার সীমা তাহাও আবিষ্কার করিতে তাহার বিলম্ব ঘটে না।

 সংগীত, শিল্প, চিত্রকলা, সৌন্দর্য, মানুষের সঙ্গ, ভাবের আলোচনা, শক্তির স্ফূর্তি প্রভৃতি জিনিস বাহির হইতে ক্রমাগত উত্তাপ দিতে থাকিলে আমাদের প্রকৃতি যে শোভায় সৌন্দর্যে একটি আশ্চর্য বিকাশ লাভ করিতে পারে, তাহা আমরা অন্য দেশের অন্য কবিদের জীবনচরিতে দেখিয়াছি। কেবল আমাদেরই দেশে এ-সকলের অভাব যে কত বড় অভাব এবং এই-সকল প্রাণের উপকরণ হইতে বঞ্চিত হইয়া থাকা যে কত বড় শূন্যতা তাহা আমরা ভালো করিয়া অনুভব করিতেও পারি না।

 কিন্তু মানুষের মনুষ্যত্বের আগুনকে চিরকাল ছাইচাপা দিয়া রাখা যায় না। যখনই সে বাহির হইতে খোঁচা পায় তখনই সে শিখা হইয়া জ্বলিয়া উঠিতে চায়। এই তাহার স্বাভাবিক ধর্ম। আমাদের এই বহুদিনের সুপ্ত দেশ একদিন সহসা বৃহৎ পৃথিবীর আঘাত পাইয়াছে। যে পশ্চিমমহাসমুদ্রতীরে মানুষের মন সচেতন ভাবে কাজ করিতেছে, চিন্তা করিতেছে ও আনন্দ করিতেছে, সেইখানকার মানসহিল্লোল আমাদের নিস্তব্ধ মনের উপর আসিয়া যখন পৌঁছিল তখন সে কি চঞ্চল না হইয়া থাকিতে পারে? আমাদের মনের এই যে প্রথম উদ্বোধনের চঞ্চলতা, ইহা তো নীরব হইয়া থাকিবার নহে। যতদিন সুপ্ত ছিলাম ততদিন আপনার মনের নানা অদ্ভুত স্বপ্ন লইয়া দিব্য রাত কাটিতেছিল, কিন্তু যখন জাগিলাম, যখন শয়নঘরের জানালার ফাঁকের মধ্য দিয়া দেখিলাম জীবনের উদার-বিস্তীর্ণ লীলাভূমিতে মানুষ দিকে দিকে আপনার বিচিত্র শক্তিকে আনন্দে পরিকীর্ণ করিয়া দিয়াছে, তখন স্বপ্নের বন্ধন ও পাথরের দেয়ালে আর তো বাঁধা থাকিতে ইচ্ছা হয় না। তখন

১২