পথ- সবটা জড়াইয়া তারি রহস্যময় একটি স্থান। এই প্রাসাদের স্মৃতি অবলম্বনেই ভবিষ্যতে “ক্ষুধিত পাষাণ” গল্পটি রচিত হয়।
এইখানে অবস্থানকালে কবির ইংরেজি শিক্ষা অনেকটা আপনাআপনি অগ্রসর হয়, ইংরেজি সাহিত্যের দুরূহ গ্রন্থসকল তিনি পাঠ করিতেন এবং তাহার ভাব অবলম্বনে বাংলায় রচনা প্রকাশ করিতেন।
কুড়ি বৎসর বয়সে ‘ভগ্নহৃদয়’ প্রকাশিত হয়। তার পরে ‘সন্ধ্যাসংগীত’। তখন ইংলণ্ড হইতে তিনি ফিরিয়া আসিয়াছেন।
‘সন্ধ্যাসংগীত’ কতক কলিকাতায় লেখা এবং কতক চন্দননগরের বাগানবাড়িতে। গঙ্গাতীরের উপর ঘাটের সোপান বাহিয়া পাথরবাঁধানো একটি প্রশস্ত সুদীর্ঘ অলিন্দ পাওয়া যাইত, বাড়িটি তাহার সঙ্গেই সংলগ্ন। সেখানে একদিন বর্ষার দিনে “ভরা বাদর মাহ ভাদর” বিদ্যাপতির পদটিতে সুর বসাইয়া সমস্ত বর্ষা সেই সুরে আচ্ছন্ন করিয়া দিয়াছিলেন— সূর্যাস্তে অনেকদিন তাঁহার দাদা জ্যোতিরিন্দ্রবাবু এবং রবীন্দ্রনাথ নৌকা ভাসাইয়া দিয়া গানের পর গানে সূর্যাস্তের সোনার উৎসব সম্পন্ন করিয়াছেন, অনেক সুপ্তিহীন জ্যোৎস্নারাত্রি ছাদের উপর কাটিয়া গিয়াছে। হিমালয়ভ্রমণের পরে এমন আনন্দময় স্থান আর কোথাও তিনি পান নাই।
গদ্যে তখন ‘ভারতী’তে ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’ বাহির হইতেছে, ‘বউঠাকুরানীর হাট’ও লেখা চলিতেছে।
‘সন্ধ্যাসংগীতে’ সর্বপ্রথমে নিজের সুর আবিষ্কার করিবার আনন্দ কবি অনুভব করিয়াছিলেন। ইহার ভাষা, ছন্দ ও ভাব হইতে তাহা স্পষ্টই বুঝা যায়। ছন্দ এলোমেলো, কিন্তু ধার করা নয়। অনুকরণ ছাড়াইয়া যে একটি স্বাধীন ব্যক্তি তাঁহার মধ্যে ফুটিয়াছিল তাহা ইহার সমস্ত অসম্পূর্ণ প্রকাশের মধ্যেও প্রকট।
২৮